বাংলা আবাস যোজনা ২০২৪, যোগ্যতা, সুবিধা, আবেদন

Updated on December 6th, 2024 ||

বাংলা আবাস যোজনা হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি প্রকল্প, যা প্রধানত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল মানুষদের স্বার্থে গঠন করা হয়েছে। এই প্রকল্পে রাজ্যের যে সকল পরিবারগুলি কাঁচা বাড়িতে বসবাস করে অথবা যাদের বাড়ি বন্যা বা ঝড়ে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বাড়ি সারাইয়ের সামর্থ্য যাদের নেই তাদের সাশ্রয়ী মূল্যের একটি আবাসন নির্মাণের জন্য ₹১,২০,০০০/- অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে। 

দেশের গরীব পরিবারগুলির জন্য আবাসন নির্মাণের জনপ্রিয় কেন্দ্রীয় প্রকল্পটি হল প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, যার অধীনে প্রায় ৩ কোটি আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার (PMAY) বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২ সালে এক ডজনেরও বেশি দল পাঠিয়েছিল এবং অবশেষে ২০২২ সালের নভেম্বরে PMAY-এর অধীনে রাজ্যের তহবিল বন্ধ করে দেয়। 

কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু গরীব মানুষ অসুবিধায় পড়েছেন, তাই কেন্দ্রকে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ করেই পশ্চিমবঙ্গে চালু হয়েছে বাংলা আবাস যোজনা।

বাংলা আবাস যোজনা লিস্ট

বাংলা আবাস যোজনা কি

বাংলা আবাস যোজনা হল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (PMAY) প্রকল্পের আদলেই করা রাজ্য সরকারের উদ্যোগ, যেখানে সম্পূর্ণ অর্থ দেবে রাজ্য সরকার। সরকারী ঘোষণায় বলা হয়েছে যে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মানবিক ভাবে বিচারের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করা হবে।

তবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের পর এবার রাজ্যের এই প্রকল্পেও বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। সারা বাংলার বিভিন্ন জেলায় সুবিধাভোগীদের নাম বাদ দেওয়া এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ এসেছে। সোনাইজুরি, মানবাজার (পুরুলিয়া), অন্ডাল (পশ্চিম বর্ধমান), গোঘাট (হুগলি), পাথরপ্রতিমা (দক্ষিণ 24 পরগনা), রামপুরহাট (বীরভূম) ইত্যাদি জায়গায় প্রাপ্য সুবিধাভোগীদের বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং এই একই দাবিতে সাধারন মানুষ বিক্ষোভও করেছে।

বাংলা আবাস যোজনা

২০২২ সালের নভেম্বরে সার্ভে হওয়া তালিকায় ১১ লক্ষ্য উপভোক্তার নাম অনুমোদন করেছিল কেন্দ্র। তবে বাংলা আবাস যোজনার ক্ষেত্রে সেই তালিকা যাচাইয়ের সময় বহু নাম বাদ যায় এবং বহু নতুন উপভোক্তার নাম সেই তালিকায় দেখা যায়, যা অস্বাভাবিক। এছাড়া যাচাইয়ের সার্ভের সময় বহু যোগ্য উপভোক্তা বাড়িতে না থাকায় তাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাই তাদের তালিকাভুক্ত করার জন্যে পুনরায় সার্ভে করার দরকার হয়ে পড়ে। 

বাংলা আবাস যোজনার (BAY) জন্য সার্ভে শেষ করার সময়সীমা ছিল ২১শে অক্টোবর থেকে ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে কিন্তু নানা প্রকারের দুর্নীতি ও অভিযোগ জমা পড়ায় নবান্ন থেকে পুনরায় সুবিধাভোগীদের তালিকা যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সরকারী তরফে জানানো হয়েছে যে কোন রকম দুর্নীতি এক্ষেত্রে বরদাস্ত করা হবে না।

তবে এই পুনরায় সার্ভে করার আরও একটি কারন হল যে এক্ষেত্রে কাঁচা বাড়ির সাথে টালি বা টিন দিয়ে করা ছাদের পাকা বাড়িগুলিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, অর্থাৎ আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এখন এই আবাস যোজনার সুবিধা পেতে চলেছেন।

গত ১৪ই নভেম্বর চূড়ান্ত পর্বের সার্ভে শেষ হয়েছে এবং ২০শে নভেম্বরের মধ্যে খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হবে। সার্ভে করা নামের তালিকা ২১শে নভেম্বর থেকে ২৭শে নভেম্বর ২০২৪ এর মধ্যে বিডিও, এসডিও, ডিএম এবং জেলা অফিসিয়াল পোর্টালে প্রকাশ করা হবে।

এই প্রকাশিত নামের তালিকাগুলি ৪ঠা ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রাম সভা দ্বারা অনুমোদন করা হবে, তারপর  ৯ই ডিসেম্বরের মধ্যে ব্লক কমিটির দ্বারা অনুমোদন এবং ১৩ই ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা আধিকারিক কমিটির দ্বারা অনুমোদন করা হবে। সুতরাং বলাই যায়, যে যোগ্য সুবিধাভোগীরা যাতে বাংলা আবাস যোজনার সুবিধা থেকে বঞ্চিত না থেকে যান সেদিকে বিশেষ নজর দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

সরকারী মতে জানা গেছে যে, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই রাজ্যের প্রায় ১১ লক্ষ ৩২ হাজার পরিবার এই প্রকল্পের প্রথম কিস্তির ₹৬০,০০০/- টাকা পেতে চলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা গ্রামীণ (PMAYG) 2024

বাংলা আবাস যোজনা বিবরণ

যোজনার নামবাংলা আবাস যোজনা
যোজনা শুরু২০২৪
যোজনার ধরনরাজ্য সরকার প্রকল্প
অনুদানের পরিমাণ₹১,২০,০০০/-
দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগরাজ্য নগর উন্নয়ন সংস্থা

বাংলা আবাস যোজনার উদ্দেশ্য

বাংলা আবাস যোজনার প্রধান উদ্দেশ্য হল রাজ্যের নিম্নবিত্ত মানুষদের জন্য একটি আবাসন নির্মাণ করা, এছাড়া অন্যান্য লক্ষ্যগুলি নিচে উল্লেখ করা হলঃ

  • রাজ্যের আর্থিকভাবে দুর্বল ও পিছিয়ে পরা পরিবারগুলির জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
  • রাজ্যের কোন মানুষ যাতে গৃহহীন না থাকেন তার ব্যবস্থা করা।
  • বন্যা বা ঝড়ে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির মেরামতের জন্য অর্থ সাহায্য করা।

বাংলা আবাস যোজনা যোগ্যতা

বাংলা আবাস যোজনার সুবিধা পেতে হলে নিম্নলিখিত যোগ্যতার মানদণ্ডগুলি পূরণ করতে হবেঃ

  • সুবিধাভোগী পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হবেন।
  • পরিবারের বার্ষিক আয় ₹১ লক্ষ থেকে ₹৩ লক্ষের মধ্যে হতে হবে।
  • পরিবারের কেউ যেন সরকারী চাকরি না করেন।
  • সুবিধাভোগীর পরিবারের কোনো ব্যক্তির সরকারি আবাসন সুবিধা যেন না থাকে।
  • কাঁচা বাড়ি বা ইটের দেওয়াল কিন্তু ছাদ ঢালাই করা নয় তারা আবেদনের যোগ্য।

বাংলা আবাস যোজনা সুবিধা

পশ্চিমবঙ্গের বাংলা আবাস যোজনার মাধ্যমে উপভোক্তারা নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পাবেনঃ

  •  নিম্নবিত্ত পরিবারগুলি সাশ্রয়ী মূল্যে একটি মজবুত ও নতুন আবাসন পাবে।
  • গৃহহীন পরিবারগুলি তাদের থাকার জন্য ঘর পাবে।
  • বন্যা বা ঝড়ে যাদের বাড়ি অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাও এই যোজনার অধীনে বাড়ি মেরামত করার অর্থ সাহায্য পাবে।
  • এই যোজনার মাধ্যমে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকার সুযোগ পাবে।

বাংলা আবাস যোজনার প্রয়োজনীয় নথি

বাংলা আবাস যোজনার ক্ষেত্রে আপনার নিম্নলিখিত নথিগুলি প্রয়োজনঃ

  • আধার কার্ড
  • ভোটার কার্ড
  • রেশন কার্ড
  • আধার যুক্ত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ

বাংলা আবাস যোজনা আবেদন করার পদ্ধতি

বাংলা আবাস যোজনায় আবেদনের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত কোন রকম পোর্টাল বা অনলাইন সুবিধা উপলব্ধ নেই। আপনি নিম্নলিখিত ২ টি পদ্ধতিতে এই যোজনায় আবেদন করতে পারবেন যথা, ব্লক অফিসে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে অথবা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার মাধ্যমে।

ব্লক অফিসের মাধ্যমে আবেদনঃ

বাংলা আবাস যোজনায় (BAY) আবেদনের জন্য আপনাকে বিডিও অফিসে যেতে হবে। এই যোজনায় আবেদনের কোন রকম নির্দিষ্ট ফর্ম নেই। আপনাকে সাদা কাগজে আপনার পরিচয়, বাড়ির অবস্থা ও প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি যাবতীয় লিখে সেই দরখাস্তটি ব্লক অফিসেই জমা করতে হবে। 

আপনার দরখাস্ত মঞ্জুর হওয়ার কিছুদিন পর ব্লক অফিসারেরা সার্ভে করতে আপনার বাড়িতে আসবেন এবং আপনার ও বাড়ির ছবি সংগ্রহ করবেন, সেক্ষেত্রে আপনি বাড়িতে না থাকলে পরিবারের বাকি সদস্যদের ছবি ও সই দিয়ে সার্ভে সম্পন্ন করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগঃ

আপনি যদি দেখেন যে আপনার বাড়ি সার্ভে করা হয়নি অথচ আপনি বাংলা আবাস যোজনার সুবিধা পাওয়ার যোগ্য সেক্ষেত্রে আপনি সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর হেল্পলাইন নম্বর 9137091370 তে যোগাযোগ করে আপানার সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার সময় হল সোম থেকে শনি সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যে ৬ টা পর্যন্ত।

Leave a Comment