Updated on June 21st, 2025 ||
যে কোন গণতান্ত্রিক দেশেই ভোট হল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জনগন তাদের ভোট প্রদানের মাধ্যমে জনমত প্রকাশ করে থাকে যার ভিত্তিতে সরকার নির্ধারিত হয়। তবে এই ভোটার লিস্টে নাম তুলতে হলে আগে কিছু শর্ত পূরণ করা আবশ্যিক। এই নিবন্ধে ভোটার কার্ডের সমস্ত শর্ত, নতুন ভোটার লিস্ট, ভোটার কার্ড আবেদন, ফর্ম ফিলাপ, স্ট্যাটাস চেক ইত্যাদি সম্বন্ধীয় যাবতীয় তথ্য দেওয়া হল।
নতুন ভোটার কার্ড কি
ভারতের ভোটার আইডি কার্ড যা ইলেক্টরস ফটো আইডেন্টিটি কার্ড (EPIC) নামে পরিচিত তা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি যা নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা প্রদান করে। এই ভোটার আইডি ১৯৯৩ সালে ভারতের নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রবর্তিত যেটি ভোটারদের পরিচয় যাচাই করে এবং নির্বাচনী ক্ষেত্রে জালিয়াতি রোধ করার পাশাপাশি সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিশ্চিত করে।
এবার দেখে নেওয়া যাক যে নতুন কার্ডে কি কি আছে? নতুন কার্ডটিতে নাম, বাবার নাম, বয়স, লিঙ্গ এবং আবাসিক ঠিকানার মতো সমস্ত নিয়মিত বৈশিষ্ট্যও থাকবে। বেশিরভাগ তথ্য ডিজিটাইজড করা হবে এবং বারকোডেও সংরক্ষণ করা হবে।
আগের ভোটার আইডি কার্ডে W-সিরিজের ১৬-সংখ্যার শনাক্তকরণ নম্বর ছিল যা নতুন কার্ডে ১০ সংখ্যার শনাক্তকরণ নম্বর দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হবে। তবে পুরানো কালো-সাদা কার্ডে মুদ্রিত ১৬ সংখ্যার নম্বরটিও বৈধ থাকবে যতক্ষণ না ভোটার এটিকে নতুন কার্ড দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।
পুরানো ভোটার আইডি কার্ডের সত্যতা সনাক্ত করার জন্য একটি হলোগ্রাম থাকে, তবে নতুনটিতে, একটি অদৃশ্য নম্বর থাকবে যা কেবল কমিশনের কর্মকর্তারা বুঝতে পারবেন, যা কার্ডের আরও ভাল সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
নতুন কার্ডটি দুটি ভাগে প্রস্তুত এবং মুদ্রিত হবে। প্রথমত, নন-পার্সোনালাইজড পিভিসি প্রিপ্রিন্ট, যেখানে কমিশনের লোগো এবং অদৃশ্য নম্বর সহ বিস্তারিত তথ্য সিইও অফিস মুদ্রণ করবে। এর পরে, কার্ডগুলি জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হবে। যেহেতু জেলা প্রশাসন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত করার দায়িত্বে রয়েছে, তাই তারা বিতরণের জন্য সিইও অফিসে পাঠানোর আগে পৃথক ভোটারদের ব্যক্তিগতকৃত তথ্য মুদ্রণ করবে।
যেহেতু কার্ডগুলি সিন্থেটিক প্লাস্টিক পলিমার দিয়ে তৈরি, তাই এটি জলরোধী এবং অটুট থাকবে। এই কার্ড তৈরির প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্র, গুজরাট, বিহার, ওড়িশা, আসাম এবং অন্যান্য রাজ্যে শুরু হয়েছে।
মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তার কার্যালয় পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ২০ লক্ষেরও বেশি নতুন ভোটার যুক্ত করেছে। পশ্চিমবঙ্গের নতুন ভোটাররা তাদের নাম ভোটার তালিকায় চেক করার জন্য ভোটার আইডি কার্ড অনুসন্ধান করতে পারবেন।

নতুন ভোটার কার্ডের গঠন
ভারতে ভোটার আইডি কার্ড হল ব্যক্তিগত পরিচয়পত্রের একটি স্বীকৃত রূপ, যা সরকারি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারি করা হয়। এতে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকেঃ
- একটি অনন্য সিরিয়াল নম্বর (EPIC নম্বর)
- কার্ডধারীর ছবি
- সংশ্লিষ্ট রাজ্য/জাতীয় প্রতীক সম্বলিত একটি হলোগ্রাম
- কার্ডধারীর নাম
- কার্ডধারীর পিতার নাম
- লিঙ্গ
- জন্ম তারিখ
কার্ডধারীর আবাসিক ঠিকানা এবং ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষের (নির্বাচনী নিবন্ধন কর্মকর্তা) স্বাক্ষর ভোটার আইডি কার্ডের পিছনে থাকে।


নতুন ভোটার লিস্ট
ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচনী এলাকা বা ওয়ার্ডের সকল যোগ্য ভোটারদের নাম রেকর্ড করে তালিকা প্রস্তুত করে অর্থাৎ নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটার তালিকায় সকল যোগ্য ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্ত থাকে। ভোটার তালিকায় আপনার নাম, বয়স, লিঙ্গ, ঠিকানা, নির্বাচনী জেলা এবং নির্ধারিত ভোটকেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি NVSP পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে অথবা নির্বাচনী বুথে অফলাইনে আপনি চেক করতে পারবেন।
যদিও ভোট দেওয়ার সময় যোগ্য ভোটার যাচাইয়ের স্বার্থে ভোটার কার্ড সাথে রাখা জরুরী তবে, আপনার নাম ভোটার তালিকায় থাকলে আপনি সরকার কর্তৃক জারি করা যেকোনো বৈধ পরিচয়পত্র ব্যবহার করেও ভোটার আইডি ছাড়াই ভোট দিতে পারেন।
ভোটার কার্ড অনলাইন স্ট্যাটাস চেক
নতুন ভোটার লিস্ট ডাউনলোড
নতুন ভোটার লিস্ট ডাউনলোড করার জন্য আপনি নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করুনঃ
- আপনাকে ন্যাশনাল ভোটার সার্ভিস পোর্টাল (NVSP) এ যেতে হবে অথবা আপনি সরাসরি ক্লিক করুন নতুন ভোটার লিস্ট।
- রাজ্য, জেলা, বিধানসভা নির্বাচন কেন্দ্র এবং ভাষা নির্বাচন করুন এবং ক্যাপচা কোড লিখতে হবে।
- আপনি ভোটকেন্দ্রের বিবরণ দেখতে পাবেন এবং ভোটার তালিকা ডাউনলোড করার জন্য ডাউনলোড আইকনে ক্লিক করতে হবে তাহলেই আপনার এলাকার ভোটার তালিকার বিবরণ আপনি পেয়ে যাবেন।
ভোটার কার্ডের শর্ত
ভোটার কার্ডের আবেদনের জন্য আপনার নিম্নলিখিত যোগ্যতাগুলি প্রয়োজনঃ
- একজন ভারতীয় নাগরিক হতে হবে।
- ভোটার তালিকা সংশোধনের বছরের যোগ্যতার তারিখে অর্থাৎ ১ জানুয়ারি, ১ এপ্রিল, ১ জুলাই এবং ১ অক্টোবর ১৮ বছর বয়স পূর্ণ করে থাকতে হবে।
- আপনি যে নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা আপনাকে সেখানকার ভোটার রূপে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
- ভোটার হিসেবে নাম নথিভুক্ত হওয়ার অযোগ্য যেন না হন।
ভোটার কার্ড করতে কি কি লাগে
নিচে ভোটার কার্ডের জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলির একটি তালিকা দেওয়া হলঃ
প্রয়োজনীয়তা | নথির তালিকা |
পরিচয় প্রমাণ | আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেশন কার্ড, পাসপোর্টের কপি, ছবি সহ ব্যাঙ্ক পাসবুক, এসএসএলসি সার্টিফিকেট, ছাত্র পরিচয়পত্র |
বয়সের প্রমাণপত্র | জন্ম সার্টিফিকেট, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভারতীয় পাসপোর্ট, দশম/অষ্টম/পঞ্চম শ্রেণীর মার্কশিট (যদি জন্ম তারিখ থাকে), শেষবার পড়াশোনা করা স্কুল/অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (সরকারি/স্বীকৃত) থেকে জন্ম সার্টিফিকেট, পৌর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত জন্ম সার্টিফিকেট |
ঠিকানার প্রমাণপত্র | ব্যাংক/কিষাণ/পোস্ট অফিসের বর্তমান পাসবুক, রেশন কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভারতীয় পাসপোর্ট, দাখিলকৃত আয়কর রিটার্ন, সর্বশেষ ভাড়া চুক্তি, সর্বশেষ জল/টেলিফোন/বিদ্যুৎ/গ্যাস সংযোগ বিল |
সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজের ছবি | শনাক্তকরণের জন্য আবেদনকারীর সাম্প্রতিক তোলা ছবি |
নতুন ভোটার কার্ড আবেদন
আপনি তিনটি উপায়ে ভোটার আইডির জন্য আবেদন করতে পারেন যথা অনলাইন, অফলাইন অথবা আধা-অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে।
নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করে আপনি অনলাইন পদ্ধতিতে ভোটার কার্ডের আবেদন করতে পারবেনঃ
- আপনাকে ন্যাশনাল ভোটারস সার্ভিসেস পোর্টাল (NVSP) এ যেতে হবে।
- প্রথমে আপনাকে হোমপেজের উপরের ডানদিকের কোণায় উপলব্ধ ‘সাইন-আপ’ বাটনে ক্লিক করে ।
- সাইন-আপ বা অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য আপনাকে প্রথমে মোবাইল নম্বর ও ক্যাপচা কোড দিতে হবে এবং তারপরে নাম ও পাসওয়ার্ড সেট করতে হবে। এরপর ওটিপি ভ্যারিফিকেশন হওয়ার পর আপনার অ্যাকাউন্টটি তৈরি হবে।
- এবার আপনাকে লগইন করতে হবে এবং তার জন্য নাম, পাসওয়ার্ড এবং পুনরায় ওটিপি ভ্যারিফিকেশনের প্রয়োজন হবে।


- এরপর আপনাকে হোম পেজেই ফর্ম ট্যাবের মধ্যে ‘নিউ রেজিস্ট্রেশন ফর জেনারেল ইলেক্টর্স’ এর মধ্যে ‘ফিল ফর্ম ৬’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- আপনাকে ফর্ম ৬ টি যথাযত ভাবে পূরণ করতে হবে, যার মধ্যে রাজ্য ও জেলা সংক্রান্ত বিবরণ, আপনার ব্যক্তিগত বিবরণ, আত্মীয়স্বজনের বিবরণ, যোগাযোগের বিবরণ, আধার বিবরণ, জন্ম তারিখ, ঠিকানা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তারপর প্রদত্ত বিভাগগুলিতে প্রয়োজনীয় নথিগুলি আপলোড করুন এবং ‘প্রিভিউ অ্যান্ড সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করলেই আপনার ভোটার কার্ড সংক্রান্ত আবেদনটি সম্পন্ন হবে।
নতুন ভোটার কার্ড সম্পর্কিত প্রশ্ন
ডিজিটাল ভোটার আইডি কী?
ডিজিটাল ভোটার আইডি বা ই-ইপিক হল আপনার ভোটার কার্ডের একটি ডিজিটাল সংস্করণ যা আপনি মোবাইল বা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন এবং আপনার পরিচয় পত্র রূপে এটির একই রকম গুরুত্ব রয়েছে।
ডিজিটাল ভোটার আইডির জন্য কীভাবে আবেদন করবো?
আপনি NVSP পোর্টালের মাধ্যমে ডিজিটাল ভোটার কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন, তার জন্য আপনাকে পোর্টালে লগইন করে ‘ফর্ম ৬’ পূরণ করতে হবে।
ভোটার আইডিতে কীভাবে সংশোধন করবো?
আপনার ভোটার আইডির বিবরণে কোনও রকম সংশোধন করতে হলে আপনাকে NVSP ওয়েবসাইটে লগ ইন করে ফর্ম ৮ পূরণ করতে হবে।