Updated on July 8th, 2024 ||
বাংলা শস্য বীমা যোজনাটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার, রাজ্যের কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করার উদ্দেশ্যে ২০১৯ সালে প্রথম চালু করেছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে কৃষকদের বিপুল ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে রাজ্য সরকার এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ হোল একটি কৃষি প্রধান রাজ্য, যেখানে মোট ৭২ লক্ষ কৃষক পরিবার বাস করে এবং যা হোল রাজ্যের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০%। কৃষির ক্ষেত্রে এই রাজ্য বিশেষ ভাবে অনুকুল হলেও বহু কৃষক প্রতি বছর ঝড়, বৃষ্টি, প্রতিকূল আবহাওয়া প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন।
তাই রাজ্য সরকার, কৃষকদের জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই বীমা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে, যেখানে ফসল রোপণ থেকে শুরু করে ফসল কাটার পরবর্তী সময় পর্যন্ত কৃষকদের বীমা কভারেজ দেওয়া হবে। তবে আলু এবং আঁখ চাষের ক্ষেত্রে কৃষকদের সামান্য প্রিমিয়াম দিতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গ কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে, এই বীমাটি পূর্বে ‘এগ্রিকালচার ইন্সুরেন্স কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া’-র সহযোগিতায় পরিচালিত হত, কিন্তু বর্তমানে ২০২৩-২৪ সালের রবি ফসলের সময় থেকে এটি ‘বাজাজ অ্যালিয়ান্স জেনারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানি’-র সহযোগিতায় পরিচালিত হচ্ছে।
অনেকেরই সাধারন ভাবে এই প্রশ্ন আসে যে কৃষক বন্ধু প্রকল্প বা কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্প করা থাকলে বাংলা শস্য বীমা করা যাবে কিনা, তা অবশ্যই করা যাবে তবে এই বীমার ক্ষেত্রে প্রতি বছর ২ বার হোল আবেদন করার সময়। খরিফ ফসলের ক্ষেত্রে আবদনের সময় হোল জুলাই-অগাস্ট এবং রবি ফসলের ক্ষেত্রে হোল ডিসেম্বর-মার্চ।
বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পের উদ্দেশ্য
বাংলা শস্য বীমা (BSB) এর অন্যতম উদ্দেশ্যগুলি হলঃ
- অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক কারণে ফসলের ক্ষতির কারনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।
- রাজ্যে কৃষিকাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং কৃষকদের আয় স্থিতিশীল করে তাদের কৃষিকাজে উৎসাহিত করা।
বাংলা শস্য বীমা প্রকল্প বিবরণ
পশ্চিমবঙ্গ বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণটি নিচে দেওয়া হলঃ
যোজনার নাম | বাংলা শস্য বীমা প্রকল্প |
উদ্যোক্তা | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
শুরুর সময় | ২০১৯ সাল |
দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ | কৃষি বিভাগ |
লাভার্থী | পশ্চিমবঙ্গের কৃষকগণ |
উদ্দেশ্য | প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যের কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান |
কভারেজ ফসল | খাদ্য শস্য (শস্য, বাজরা এবং ডাল),তৈলবীজ,বার্ষিক বাণিজ্যিক / উদ্যান ফসল (পাট, আলু এবং আখ) |
আবেদন পদ্ধতি | অফলাইনে ব্লক কৃষি দপ্তরে ফর্ম ফিলাপ করে জমা করতে হবে |
সরকারী ওয়েবসাইট | https://banglashasyabima.net/ |
বাংলা শস্য বীমার টাকা কবে ঢুকবে
চলতি বছরের (২০২৪) জুন মাসেই এই প্রকল্পের ২ লক্ষ ১০ হাজার কৃষকদের ₹২৯৩ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা রাজ্য প্রদান করেছে। ২০১৯ সালে প্রকল্পের শুরু থেকে চলতি বছর ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি কৃষককে মোট ₹৩,১৩৩ কোটি টাকার অর্থ প্রদান করা হয়েছে।
গত বছর অসময়ের বৃষ্টিপাতের ফলে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান জেলার আলু ও ধান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল যেমন শুধু পূর্ব বর্ধমান জেলায় ৪৭ হাজার ১১৭ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এছাড়া গত বছর রাজ্যে ধান চাষেও প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল, তবে প্রায় ৫ লক্ষ চাষির আমন ধান চাষের বীমা থাকার কারনে চাষিদের প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব হয়েছিল।
২০২১ সালেও এই রকমই আলু চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল এবং ক্ষতিগ্রস্ত জেলায় প্রায় ৭০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছিল।
আপনি যদি বীমার জন্য আবেদন করে থাকেন তবে আপনি বাজাজ অ্যালায়েন্স ওয়েবসাইট থেকে স্ট্যাটাস চেক করতে পারেন। ইতিমধ্যে বেশ কিছু কৃষক বীমার টাকা পেলেও অনেক কৃষকই এখনও টাকা পাননি এবং বর্তমানে স্ট্যাটাস দেখাচ্ছে যে ‘There is no shortfall in yield data. Hence no yield claim payable.’ অর্থাৎ ফসলের কোনরকম ক্ষতি না হওয়ার কারনে কোন টাকা দেওয়া হবে না।
যেহেতু স্যাটেলাইট ডেটার ওপর নির্ভর করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় তাই স্বল্প ক্ষতির ক্ষেত্রে আপনার ক্লেইমটি বাতিল হয়ে যেতে পারে। তবে এই অসুবিধা দূরীকরণের জন্য বর্তমানে আধিকারিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত চাষের ক্ষেতে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ যাচাই করছেন।
বাংলা শস্য বীমা লিস্ট
নিম্ন উল্লিখিত মোট ১৩টি ফসলকে এই বীমার অধীনে রাখা হয়েছেঃ
- বোরো ধান
- গম
- রবি ভুট্টা
- গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা
- ছোলা
- মসুর ডাল
- মুগ (গ্রীষ্ম)
- সরিষা
- তিল (গ্রীষ্ম)
- চীনাবাদাম (গ্রীষ্ম)
- আলু
- আখ
- খেসারি
বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা
নিচে এই প্রকল্পের বৈশিষ্ট ও সুবিধাগুলি তালিকাবদ্ধ করা হলঃ
কৃষকদের কভারেজ
- বিজ্ঞাপিত এলাকায় বিজ্ঞাপিত ফসলের চাষাবাদকারী সমস্ত কৃষক, ভাগচাষী এবং ভাড়াটিয়া কৃষক এই বীমা কভারেজের জন্য যোগ্য।
- বিজ্ঞাপিত ফসলের ক্ষেত্রে, মৌসুমী কৃষির জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণকারী সমস্ত কৃষকের বাংলা শস্য বীমা করা আবশ্যিক।
- ঋণগ্রহীতা নয় এমন কৃষকদের জমির মালিকানা বা দখলের প্রয়োজনীয় নথি, RoR প্রমাণ প্রভৃতি এবং মৌখিক ইজারা, ভাড়াটে, শেয়ার ক্রপারদের ক্ষেত্রে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দ্বারা ইস্যু করা জমির দখলের শংসাপত্র বা ব্লক কৃষি আধিকারিক (ADA) দ্বারা জারি করা চুক্তির বিশদ বিবরণ বা বপন করার শংসাপত্র বা চাষের প্রমাণ জমা দিতে হবে।
ফসলের ঝুঁকির কভারেজ
২০২৩-২৪ সালের বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পের বীমার শর্তাবলীগুলি নিচে উল্লেখ করা হলঃ
- প্রতিরোধকৃত বপন/বপনে ব্যর্থঃ শুধুমাত্র বোরো (গ্রীষ্মকালীন) ধান এবং আলু এই ঝুঁকির আওতায় থাকবে।
- মধ্যকালীন মৌসুমের প্রতিকূলতাঃ শুধুমাত্র বোরো (গ্রীষ্মকালীন) ধান এবং আলু এই ঝুঁকির আওতায় থাকবে।
- শস্য-বপন থেকে ফসল কাটাঃ সমস্ত বিজ্ঞাপিত ফসল এই ঝুঁকির আওতায় থাকবে।
কভারেজ সীমা
ঋণগ্রহীতা কৃষক এবং ঋণ গ্রহীতা নয় যারা, এমন উভয় কৃষকদের ক্ষেত্রেই হেক্টর প্রতি বিমার পরিমাণ সমান হবে। এই পরিমাণ জেলা স্তরের কারিগরি কমিটি তদুপরি পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা নির্ধারিত।
ফসলের ক্ষতি নির্ধারণ
বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পে, ফসলের ক্ষতির পরিমাণ প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে নির্ণয় করা হবে এবং ফসলের প্রকৃত ক্ষতির মূল্যায়ন এবং শস্য বীমা দাবির দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য স্যাটেলাইট ডেটা, আবহাওয়ার তথ্য এবং গ্রাউন্ড-ট্রুথিং প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে।
উচ্চ, মাঝারি এবং নিম্ন স্তরের ঝুঁকির ওপর নির্ভর করে সমস্ত ফসলের ক্ষতিপূরণের মাত্রাতেও তিনটি স্তর রাখা হয়েছে যথাক্রমে, ৭০%, ৮০% এবং ৯০%৷ রাজ্য সরকার বীমা কোম্পানির সাথে পরামর্শ করে জেলা ও উপ-জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞাপিত ফসল এবং এলাকার জন্য ক্ষতিপূরণের মাত্রা অনুমোদন করবে।
২০২৩-২৪ রবি মরশুমের ক্ষেত্রে আলুর জন্য ক্ষতিপূরণের মাত্রা হবে ৭০% এবং অন্যান্য সমস্ত বিজ্ঞাপিত ফসলের জন্য হবে ৯০%।
বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পের অধীনে ঝুঁকির কভারেজ
নিম্নলিখিত পর্যায়গুলিতে ফসলের ক্ষতির ক্ষেত্রে তা বীমা প্রকল্পের আওতায় পড়বেঃ
- রোপণ বপন/রোপণ ঝুঁকিঃ বৃষ্টিপাতের ঘাটতি বা প্রতিকূল ঋতু পরিস্থিতির কারণে বীমাকৃত এলাকায় রোপণ বা বপন না করা গেলে ক্ষতিপূরণ দাবী করা যাবে এবং সেক্ষেত্রে বিমাকৃত রাশির সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে।
- স্থায়ী ফসল বপন থেকে ফসল কাটাঃ অপ্রতিরোধযোগ্য প্রাকৃতিক ঝুঁকির কারণে ফলনের ক্ষতি পূরণের জন্য বীমা প্রদান করা হয়, যেমন খরা, শুষ্কতা, বন্যা, প্লাবন, কীটপতঙ্গ, রোগের আক্রমণ, ভূমিধস, প্রাকৃতিক আগুন, বজ্রপাত, ঝড়, শিলাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, টাইফুন, হারিকেন, টর্নেডো ইত্যাদি।
- ফসল-পরবর্তী ক্ষতিঃ ফসল কাটার পর তা শুকানোর জন্য ছড়িয়ে রাখা অবস্থায়, সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ পর পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় এবং অমৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্য।
- স্থানীয় বিপর্যয়ঃ শিলাবৃষ্টি, ভূমিধস এবং জলাবদ্ধতার মতো ঘটনাগুলি স্থানীয় বিপর্যয় রূপে চিহ্নিত করা হবে এবং তা ক্ষতিপূরণ দাবীর যোগ্য হবে।
- সাধারণ বর্জনঃ যুদ্ধ এবং পারমাণবিক ঝুঁকি, দূষিত ক্ষতি এবং অন্যান্য প্রতিরোধযোগ্য ঝুঁকির ফলে সৃষ্ট ক্ষতি এই বীমা প্রকল্পের আওতায় ধরা হবে না।
বাংলা শস্য বীমা প্রিমিয়াম
এই বীমার অধীনে অধিকাংশ ফসলের প্রিমিয়াম রাজ্য সরকারের তরফ থেকে সম্পূর্ণ প্রদান করা হয়ে থাকে। নিম্নলিখিত সারণীতে কৃষক কর্তৃক প্রদেয় বীমা প্রিমিয়ামের হার উল্লেখ করা হলঃ
ফসলের ধরণ | শস্য | কৃষক কর্তৃক প্রদেয় সর্বোচ্চ বীমা প্রিমিয়াম (বীমাকৃত অর্থের %) |
খারিফ | সমস্ত খাদ্যশস্য ও তৈলবীজ শস্য এবং পাট | শূন্য |
রবি | সমস্ত খাদ্যশস্য এবং তৈলবীজ শস্য | শূন্য |
খারিফ ও রবি | বাণিজ্যিক ফসলঃ আলু এবং আখ | বীমাকৃত অর্থ বা প্রকৃত হারের ৪.৮৫%, যেটি কম হবে |
বাংলা শস্য বীমার সময়সীমা
২০২৪ সালের বাংলা শস্য বীমার অধীনে জুট ফসলের সময়সীমাঃ
কার্যকলাপ | জুট |
তালিকাভুক্তির শেষ তারিখ (কাট-অফ ডেট) | ৩১-০৫-২০২৪ |
রোপণের শেষ তারিখ (কাট-অফ ডেট) | ৩১-০৮-২০২৪ |
রোপণের ক্ষতিপূরণ দাবীর শেষ দিন | প্রযোজ্য নয় |
মধ্যকালীন-মৌসুমের ক্ষতিপূরণ দাবীর শেষ দিন | প্রযোজ্য নয় |
রোপণের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শেষ দিন | ফসল কাটার ৪৫ দিনের মধ্যে |
২০২৩-২৪ সালের এই বীমার ফসল প্রতি ক্ষতিপূরণ দাবী এবং অর্থ প্রাপ্তির শেষ দিনগুলি নিচে তালিকাবদ্ধ করা হলঃ
কার্যকলাপ | আলু | বোরো ধান | গম, ছোলা, মসুর, সরিষা, খেসারি ও রবি ভুট্টা | গ্রীষ্মকালীন ভুট্টা, গ্রীষ্মকালীন মুগ, গ্রীষ্মকালীন তিল, গ্রীষ্মকালীন চীনাবাদাম এবং আখ |
তালিকাভুক্তির শেষ দিন (কাট-অফ ডেট) | ৩১-১২-২০২৩ | ৩১-০১-২০২৪ | ৩১-১২-২০২৩ | ১৫-০৩-২০২৪ |
রোপণের ক্ষতিপূরণ দাবীর শেষ দিন | ১৫-০১-২০২৪ | ১৫-০২-২০২৪ | উল্লেখ নেই | উল্লেখ নেই |
মধ্যকালীন-মৌসুমের ক্ষতিপূরণ দাবীর শেষ দিন | ১৫-০২-২০২৪ | ৩০-০৪-২০২৪ | উল্লেখ নেই | উল্লেখ নেই |
রোপণের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শেষ দিন | ক্ষতিপূরণ দাবীর ৪৫ দিনের মধ্যে | ক্ষতিপূরণ দাবীর ৪৫ দিনের মধ্যে | উল্লেখ নেই | উল্লেখ নেই |
মধ্যকালীন-মৌসুমের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শেষ দিন | ক্ষতিপূরণ দাবীর ৪৫ দিনের মধ্যে | ক্ষতিপূরণ দাবীর ৪৫ দিনের মধ্যে | উল্লেখ নেই | উল্লেখ নেই |
মরসুমের শেষের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার শেষ দিন | ফসল কাটার ৪৫ দিনের মধ্যে | ফসল কাটার ৪৫ দিনের মধ্যে | ফসল কাটার ৪৫ দিনের মধ্যে | ফসল কাটার ৪৫ দিনের মধ্যে |
বাংলা শস্য বীমা যোজনার প্রয়োজনীয় নথিপত্র
কৃষককে ফসলের বীমার জন্য তার চাষকৃত জমির মালিকানা, প্রজাস্বত্ব বা চাষাবাদের অধিকার সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ জমা করতে হবে। আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলির তালিকা নিচে উল্লেখ করা হোলঃ
- গ্রাম পঞ্চায়েত বা ব্লকের নাম, গ্রাম, মৌজা, জেএল নং, প্লট নম্বর এবং ফসল অনুযায়ী চাষ করা এলাকার পরিমাণ (একরের মাপে)।
- KYC নথিঃ বর্তমান ভোটার আইডি কার্ড এবং আধার কার্ডের অনুলিপি।
- ব্যাঙ্কের বিবরণঃ পাস বই বা বাতিল চেকের একটি অনুলিপি সহ NEFT সক্ষম ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ৷
- জমির মালিকের ক্ষেত্রেঃ খতিয়ান/পর্চা/পাট্টা/ দলিলের কপি।
- অ-মালিক চাষীদের ক্ষেত্রেঃ অ-মালিক চাষীরা যেমন শেয়ার-ফসলকারী, ভাড়াটিয়া কৃষক বা আত্মীয়দের নামে থাকা জমি চাষ করা কৃষকরা বীমা কভারেজের জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের দ্বারা জারি করা জমি দখলের শংসাপত্রের অনুলিপি দেখাতে পারেন।
বাংলা শস্য বীমার আবেদন
নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে আপনি বাংলা শস্য বীমার আবেদন করতে পারবেনঃ
- আবেদনকারীকে উপরে উল্লিখিত আবেদনের গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলি নিয়ে স্থানীয় ব্লক কৃষি দপ্তরে যেতে হবে।
- সেখান থেকে বাংলা শস্য বীমার ফর্মটি সংগ্রহ করতে হবে এবং যথাযত ভাবে পূরণ করতে হবে।
- আপনাকে সেখানে মূল ফর্মের সাথে একাধিক সংযুক্ত ফর্ম (অ্যানেক্সার) পূরণ করতে হতে পারে এবং ফর্মের সাথে প্রয়োজনীয় নথিগুলি যুক্ত করে তা জমা করতে হবে।
বাংলা শস্য বীমা ফর্ম
আবেদনের ফর্মটি আপনি অফলাইনে ব্লক কৃষি দপ্তরে গিয়ে পাবেন অথবা সরকারী ওয়েবসাইট ‘banglashasyabima.net’ থেকে ডাউনলোড করতে পারেন।
ফর্মটি সরাসরি ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন বাংলা শস্য বীমা ফর্ম।
বাংলা শস্য বীমা স্ট্যাটাস চেক
বাংলা শস্য বীমার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পরে, নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে আপনি আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেনঃ
- আপনাকে বাংলা শস্য বীমার সরকারী পোর্টালে গিয়ে ‘অ্যাপলিকেশন স্ট্যাটাস’-এ ক্লিক করতে হবে।
- এই পেজে আপনাকে ‘অ্যাপলিকেশন আইডি’ লিখে ‘চেক’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
- তাহলেই আবেদনকারীর সমস্ত ডিটেলস সহ স্ট্যাটাসটি নিচে দেখা যাবে।
- নিচের ‘ডাউনলোড সার্টিফিকেট’ বাটনে ক্লিক করে আবেদনকারী বাংলা শস্য বীমার সার্টিফিকেটটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
অথবা
- আপনি যদি সরাসরি বাজাজ অ্যালায়েন্স-এর ওয়েবসাইট থেকে স্ট্যাটাস চেক করতে চান তাহলে ক্লিক করুন বাজাজ অ্যালায়েন্স কৃষক স্ট্যাটাস এবং আবেদন নম্বর বা ফার্মার আইডি দিয়ে ‘সার্চ’ করতে পারেন।
বাংলা শস্য বীমা ক্ষতিপূরণ দাবী
বাংলা শস্য বীমাকারীর যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ফসলের ক্ষতি হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে ঘটনার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রকল্পের টোল ফ্রি নম্বরে, সরাসরি বীমা কোম্পানি, সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক, স্থানীয় কৃষি দপ্তর বা জেলা আধিকারিককে জানাতে হবে।
মনে রাখতে হবে সর্বপ্রথম প্রকল্পের টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০২০৯৫৯৫৯ -এ জানাতে হবে এবং সেক্ষেত্রে তা সম্ভব না হলে, সরাসরি বীমা কোম্পানি বা সরকারি কৃষি আধিকারিকদের কাছে যেতে হবে।
বাংলা শস্য বীমা হেল্পলাইন নম্বর
এই বীমা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে আপনি নিম্নলিখিত হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেনঃ
বীমা তালিকাভুক্তি এবং দাবি সম্পর্কিত প্রশ্নের জন্য হেল্পলাইন নম্বরঃ
- 18002095959 (টোল ফ্রি)
- bagichelp@bajajallianz.co.in
BSB পোর্টাল এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন সম্পর্কিত সহায়তার জন্য হেল্পলাইন নম্বরঃ
- 8373094077, 8336900632 [10:00 A.M.- 6:00 P.M.] [সোম-শনি]
বাংলা শস্য বীমা সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্নের জন্যঃ
- banglashasyabima@ingreens.in
বাংলা শস্য বীমা প্রকল্প সম্পর্কিত প্রশ্ন
বাংলা শস্য বীমা কি প্রতি বছর করতে হয়?
হ্যাঁ, বাংলা শস্য বীমা প্রতি বছর করতে হয় এবং বছরে ২ টি সময় এই বীমার ফর্ম ফিলাপ করা হয়, একবার খারিফ এবং আরেকবার রবি ফসলের সময়।
বাংলা শস্য বীমায় প্রিমিয়ামের পরিমাণ কত?
এই বীমার প্রিমিয়াম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তরফ থেকে প্রদান করা হয়ে থাকে, তাই রাজ্যের কৃষকরা বিনামূল্যে এই শস্য বীমা উপলব্ধ করতে পারেন। তবে আলু এবং আঁখের ক্ষেত্রে চাষিদের বীমাকৃত অর্থের ৪.৮৫% প্রিমিয়াম দিতে হয়।
বাংলা শস্য বীমার আবেদন কিভাবে করবো?
বীমার আবেদনের জন্য স্থানীয় ব্লক কৃষি দপ্তরে বা জেলা কৃষি আধিকারিকের দপ্তরে গিয়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে এবং পূরণ করে ও সংশ্লিষ্ট নথির সাথে তা জমা করতে হবে।
বাংলা শস্য বীমার অধীনে ফসলের ক্ষতির ক্ষেত্রে কি করতে হবে?
বাংলা শস্য বীমায় ফসলের ক্ষতির ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকল্পের টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০২০৯৫৯৫৯ তে জানাতে হবে, অন্যথা সরাসরি বীমা কোম্পানি, স্থানীয় ব্লক কৃষি দপ্তর বা জেলা আধিকারিককে জানাতে হবে।