Updated on August 22nd, 2024 ||
নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন ২০১৯ বা সিএএ হল বর্তমানে সারা দেশের সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয়। গত ১১ই মার্চ, ২০২৪ এই আইনটি প্রয়োগ করা হলেও অনেকের মনেই এই আইন নিয়ে এখনও বহু প্রশ্ন ও সংশয় রয়েছে। কেন এই সংশয়, সিএএ কি, কাদের জন্য এবং কিভাবে আবেদন করতে হবে সে সম্বন্ধীয় বিস্তারিত এই নিবন্ধে আলোচনা করা হল।
নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন ২০১৯। সিএএ কি
‘নাগরিকত্ব সংশোধন আইন’ অর্থাৎ ‘সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (CAA)’ হল ভারতের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধিত রুপ। এই আইনে বলা হয়েছে যে, ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে বা তার আগে, শুধুমাত্র ৩ টি দেশ যথাক্রমে আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অর্থাৎ হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।
এবার দেখে নেওয়া যাক অবৈধ অভিবাসী কাদের বলে এবং সেক্ষেত্রে কি বিধান রয়েছেঃ
আইন অনুসারে একজন অবৈধ অভিবাসী হলেন তিনি যে-
- বৈধ নথি ছাড়াই দেশে প্রবেশ করেছেন, যেমন পাসপোর্ট এবং ভিসা
অথবা
- বৈধ নথির সাথে প্রবেশ করেছেন, কিন্তু অনুমোদিত সময়সীমা পেড়িয়ে এই দেশেই থেকে গেছেন
আইন অনুসারে এই সমস্ত অবৈধ অভিবাসীদের ‘বিদেশী আইন ১৯৪৬’, এবং ‘পাসপোর্ট আইন ১৯২০’ অনুযায়ী বন্দী বা নির্বাসিত হওয়ার বিধান রয়েছে, কিন্তু ভারত সরকার অভিবাসীদের সুবিধার্থে নাগরিকত্ব আইনটি সংশোধন করেছে যাতে তাদের ভারতের নাগরিকত্ব প্রদান করা যায়, তবে এজন্য অভিবাসীদের অবশ্যই সঠিক ডকুমেন্টস প্রদান করতে হবে। যাদের উপযুক্ত ডকুমেন্টস নেই তাদের ক্ষেত্রে কি করা হবে এই বিষয়ে সরকার এখনও কিছু প্রকাশ করেনি, তবে ৮৫% অভিবাসীদেরই উপযুক্ত ডকুমেন্টস রয়েছে বলে জানা গেছে।
নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন ২০১৯ উদ্দেশ্য ও বিবরণ
সিএএ ২০২৪ সালে লাগু করা হলেও এই আইনটি ১১ই ডিসেম্বর ২০১৯ সালেই সংসদ দ্বারা পাস করা হয়েছিল এবং পরের দিন অর্থাৎ ১২ই ডিসেম্বর এই আইনের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, তবে রুলস তৈরি না হওয়ায় আইনটি তখন বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের ১১ই মার্চ সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট রুলস ২০২৪ লাগু করা হয়েছে।
এবার দেখে নেওয়া যাক ভারতবর্ষে নাগরিকত্ব আইনটি কিঃ-
আমরা জানি ১৯৪৭ সালে হিন্দু এবং মুসলিম এই দুটি ধর্মের ওপর ভিত্তি করে ভারতবর্ষকে মোট তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিল যথাক্রমে ভারত, পাকিস্থান এবং পূর্ব পাকিস্থান, যার ফলে লক্ষাধিক মানুষকে স্থানান্তরিত হতে হয়। বর্তমানেও এই স্থানান্তরিত হয়ে আসা মানুষদের সুবিধার্থেই নাগরিকত্ব আইনটি সংশোধন করা হয়েছে।
আমাদের ভারতের সংবিধান প্রথম লাগু করা হয়েছিল ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি তা আমরা সকলেই জানি। এই সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায়টি হল ‘নাগরিকত্ব’ বিষয়ক অর্থাৎ স্বাধীন ভারতের নাগরিকত্ব কাদের দেওয়া হবে, কাজের সূত্রে অন্য দেশে গিয়ে থাকতে হলে কি হবে, যাদের অন্য দেশের নাগরিকত্ব আছে বা যারা পরে ভারতবর্ষে এসে থাকতে চান সেক্ষেত্রে কি করতে হবে এই সমস্ত যাবতীয় বিষয় সংবিধানের আর্টিকেলস ৫-১১ তে উল্লেখ করা আছে। তবে সময়ের সাথে সাথে এই সংবিধানের আইন কিছু অংশে পরিবর্তন করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানে এই ‘নাগরিকত্ব’ বিষয়টি ‘ইউনিয়ন লিস্ট’ এর অধীনস্ত হওয়ায় এই নাগরিকত্ব বিষয়ক কোনরূপ সংশোধনের অধিকার শুধুমাত্র পার্লামেন্টের কাছেই আছে। ১৯৫৫ সালে প্রথম এই নাগরিকত্ব আইনে নতুন সংযুক্তিকরণ করা হয়েছিল যা ‘নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫’ নামে চিহ্নিত, এবং তারপর থেকে বর্তমান ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই আইন ১৯৮৬, ১৯৯২, ২০০৩, ২০০৫, ২০১৫ এবং ২০১৯ মোট ছয় বার পরিবর্তন করা হয়েছে।
বর্তমানে লাগু হওয়া সিএএ হল এই ২০১৯ সালে পরিবর্তিত হওয়া ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন’। যে আইনে বলা হয়েছে যে ভারতের প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অভিবাসী মানুষ যারা ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখের মধ্যে ভারতে প্রবেশ করেছেন তাদের মধ্যে হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ২০১৯ (সিএএ) উদ্দেশ্য
এবার দেখে নেওয়া যাক যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-২০১৯ এর প্রয়োজন হল কেন! তা জানতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে যে ভারত হল আন্তর্জাতিক অভিবাসীদের নিরিখে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি।
২০১৫ সালের গণনা অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ৫.২ মিলিয়ন অভিবাসী বসবাস করেন, যা হল বিশ্বের ১২তম বৃহত্তম অভিবাসী জনসংখ্যা, এবং দেখা গেছে ভারতের অভিবাসীদের সিংহভাগই হল প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ (৩.২ মিলিয়ন) এবং পাকিস্তান (১.১ মিলিয়ন)।
আক্ষেপের বিষয় যে মাত্র কয়েক দশক আগে এই দেশ দুটি ভারতেরই অংশ ছিল এবং ধর্মের ওপর ভিত্তি করে দেশটির ৩ টুকরো করা হয়। সিএএ-২০১৯ নিয়ে যে অন্যতম সংশয় রয়েছে তা হল নাগরিকত্বের ধর্মের তালিকায় কেন ইসলাম ধর্মকে রাখা হল না। সরকারপক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, প্রতিবেশী দেশগুলির উৎপীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অভিবাসীদের জন্যই এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন করা হয়েছে। তবে এটি উহ্য থেকে গেছে যে, ইসলাম ধর্মীদের ভারত দুটি দেশ উপহার দিয়েছিল এবং অবিভক্ত ভারতে সিএএ-২০১৯ এর কোন প্রয়োজনই ছিল না।
CAA নিয়ম (CAA Rules 2024)
কেন্দ্রীয় সরকার ১১ই মার্চ, ২০২৪ তারিখে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর করার নিয়মগুলি জারি করেছে, যা ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী রুলস ২০২৪’ নামে পরিচিত। এই রুলসে বলা হয়েছে যে ধারা 6B এর অধীনে কারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে যে, নাগরিকত্বের জন্য রেজিস্ট্রেশন বা স্বাভাবিক রুপেই ভারতীয় তা প্রমানের আবেদন গ্রহণ করা হবে না যদি না-
- ব্যক্তি ভারতীয় বংশোদ্ভূত হন।
- ব্যক্তি ভারতের একজন নাগরিককে বিয়ে করেন।
- আবেদক ব্যক্তিটি ভারতের নাগরিক একজন ব্যক্তির নাবালক সন্তান।
- ব্যক্তির বাবা-মা ভারতের নাগরিক হিসাবে নিবন্ধিত।
- ব্যক্তি বা তার পিতামাতার মধ্যে একজন স্বাধীন ভারতের নাগরিক ছিলেন।
- ব্যক্তিটি ভারতের কার্ডধারী বিদেশী নাগরিক হিসাবে নিবন্ধিত।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ২০১৯ যোগ্যতার মানদণ্ড
- ব্যক্তিকে অবশ্যই নিম্নলিখিত দেশের যেকোনো একটির নাগরিক হতে হবেঃ
- পাকিস্তান
- আফগানিস্তান
- বাংলাদেশ
- ব্যক্তিকে সেই দেশের নিম্নোক্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যেকোনো একটির অন্তর্গত হতে হবেঃ
- হিন্দু
- শিখ
- জৈন
- বৌদ্ধ
- পার্সি
- খ্রিস্টান
- ব্যক্তিকে অবশ্যই ৩১শে ডিসেম্বর, ২০১৪ তারিখে বা তার আগে ভারতে প্রবেশ করতে হবে।
- ব্যক্তির আবেদনের তারিখের ঠিক আগে একটানা ১২ মাস ভারতে বসবাস করতে হবে।
- উল্লিখিত ১২ মাসের আগের চৌদ্দ বছরের মধ্যে কম করে ৫ বছর ভারতে বসবাস করতে হবে।
সিএএ কি কি ডকুমেন্ট
‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯’ এ আবেদনের জন্য আবেদনকারীদের তাদের দেশ, ধর্ম, ভারতে প্রবেশের তারিখের প্রমান দিতে হবে এবং যে কোন একটি ভারতীয় ভাষাও জানা থাকতে হবে।
বহিরাগতর মূল দেশের প্রমানঃ
‘সিএএ ২০১৯’ আইনে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে যে ভারতের প্রতিবেশী আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা বহিরাগতরাই এই আইন অনুসারে আবেদেন করতে পারবেন এবং তাদের মূল দেশের প্রমানরূপে সেই দেশের পাসপোর্ট অথবা তাদের জন্ম শংসাপত্র, শিক্ষাগত শংসাপত্র, এবং দেশগুলির দ্বারা জারি করা যে কোন পরিচয়পত্র বা অন্য কোন সরকারী নথি দেখাতে পারেন।
ভারতে প্রবেশের তারিখের প্রমানঃ
আবেদনকারী যে ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ এর আগে ভারতে প্রবেশ করেছেন, তার প্রমান স্বরূপ ভিসা, ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্প, সরকার ইস্যুকৃত আইডি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, কর্মসংস্থান রেকর্ড, ইউটিলিটি বিল, ভারতের স্কুল সার্টিফিকেট ইত্যাদি নথি প্রদান করা যেতে পারে।
ধর্মীয় পরিচয় প্রমাণঃ
আবেদনকারীরা তাদের ধর্মীয় পরিচয় প্রমাণ রূপে পাসপোর্ট, জন্ম শংসাপত্র, সরকারী আইডি কার্ড, স্কুল সার্টিফিকেট, সরকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জারি করা লাইসেন্স, জমির রেকর্ড ইত্যাদি দেখাতে পারবেন। এছাড়া বিচার বিভাগ অথবা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে আবেদনকারী তার জাতী এবং ধর্ম ঘোষণা করে শপথ করা হলফনামাটিও প্রমান স্বরূপ দাখিল করতে পারবেন।
ভাষার প্রমানঃ
আবেদনকারীর ভারতের কোন ভাষায় বলতে বা পড়তে বা লিখতে পারার ক্ষমতাই পর্যাপ্ত জ্ঞান আছে বলে বিবেচিত করা হবে।
ভারতীয় নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫
এবার দেখে নেওয়া যাক যে নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ তে ভারতীয় নাগরিকত্ব অধিগ্রহণ এবং নির্ধারণ সম্মন্ধীয় কি বলা আছে।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর এত বিপুল পরিমান মানুষের স্থানান্তর ঘটেছিল যে ১৯৫০ সালে সংবিধান লাগু হওয়ার ৫ বছরের মধ্যেই ১৯৫৫ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনটি সংশোধন করা হয় যা ‘নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫’ নামে পরিচিত।
এই আইনে স্পষ্ট করা হয়েছে যে ভারতের নাগরিকত্ব মোট চারটি উপায় হতে পারে যথাক্রমে জন্ম, বংশ, নিবন্ধন এবং প্রাকৃতিককরণ।
জন্মগতভাবেঃ
- ২৬.০১.১৯৫০ বা তার পরে কিন্তু ০১.০৭.১৯৮৭ এর আগে ভারতে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি তার পিতামাতার জাতীয়তা নির্বিশেষে একজন ভারতীয় নাগরিক।
- ০১.০৭.১৯৮৭ থেকে ০২.১২.২০০৪-এর মধ্যে ভারতে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি ভারতের একজন নাগরিক, কারণ তার জন্মের সময় তার পিতামাতার মধ্যে একজন দেশের নাগরিক।
- ০৩.১২.২০০৪ তারিখে বা তার পরে ভারতে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তি দেশের একজন নাগরিক কারণ তার পিতামাতা উভয়ই ভারতীয় বা অন্তত একজন পিতামাতা ভারতের নাগরিক এবং অন্যজন জন্মের সময় অবৈধ অভিবাসী নয়৷
বংশানুক্রমেঃ
- ২৬শে জানুয়ারী, ১৯৫০ তারিখে বা তার পরে ভারতের বাইরে জন্মগ্রহণকারী ব্যাক্তির পিতা যদি জন্মসূত্রে ভারতের নাগরিক হন তবে তিনিও বংশগতভাবে ভারতের নাগরিক।
- একজন ব্যক্তি যদি ১০ই ডিসেম্বর, ১৯৯২ বা তার পরে কিন্তু ৩রা ডিসেম্বর, ২০০৪ এর আগে ভারতের বাইরে জন্মগ্রহণ করেন, তার পিতামাতার মধ্যে কেউ জন্মসূত্রে ভারতের নাগরিক হলে তিনিও ভারতের নাগরিক।
- ৩রা ডিসেম্বর, ২০০৪ এর পরে ভারতের বাইরে জন্মগ্রহণকারী কোনও ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব অর্জন করতে হলে, তার পিতামাতাকে ঘোষণা করতে হবে যে নাবালকের কাছে অন্য দেশের পাসপোর্ট নেই এবং তার জন্মের এক বছরের মধ্যে ভারতীয় কনস্যুলেটে রেজিস্টার্ড হয়েছে।
নিবন্ধন দ্বারাঃ
- ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন ব্যক্তি যিনি নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার আগে ৭ বছর ধরে ভারতের বাসিন্দা ছিলেন।
- ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন ব্যক্তি যিনি অবিভক্ত ভারতের বাইরের যেকোনো দেশের বাসিন্দা।
- একজন ব্যক্তি যিনি একজন ভারতীয় নাগরিকের সাথে বিবাহিত এবং নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার আগে ৭ বছর ভারতে বসবাস করেছেন।
- যারা ভারতের নাগরিক তাদের নাবালক সন্তান।
প্রাকৃতিকীকরণ দ্বারাঃ
- একজন ব্যক্তি স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারেন যদি তিনি স্বাভাবিক ভাবে ১২ বছর (আবেদনের তারিখের ১২ মাস আগে এবং মোট ১১ বছর) ভারতের বাসিন্দা হন এবং নাগরিকত্ব আইনের তৃতীয় অনুসূচীর সমস্ত যোগ্যতা পূরণ করেন।
সিএএ আবেদন
‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯’ এর আবেদনের ক্ষেত্রে মোট ৭ প্রকার ফর্ম আছে। ব্যাক্তিকে ভিন্ন অবস্থার জন্য ভিন্ন ফর্ম পূরণ করতে হবে। তবে অফলাইন ফর্ম জমা করার প্রয়োজন নেই, সুবিধার জন্য সরকার অনলাইন পোর্টালের ব্যবস্থা করেছে।
নিচে কোন ক্ষেত্রে আপনাকে কি ফর্ম পূরণ করতে হবে তার সম্পূর্ণ তালিকাটি দেওয়া হলঃ
যোগ্যতার বিভাগ | ফর্ম নম্বর |
ভারতের নাগরিক হিসেবে নিবন্ধনের জন্য ভারতীয় বংশোদ্ভূত একজন ব্যক্তি | IIA |
একজন ব্যক্তি যিনি একজন ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করেছেন | IIIA |
ব্যক্তিটি হলেন ভারতের নাগরিকের একজন নাবালক সন্তান | IVA |
একজন ব্যক্তি যার পিতামাতা ভারতের নাগরিক হিসাবে নিবন্ধিত বা ন্যাচারালাইজড | VA |
একজন ব্যক্তি যিনি নিজে বা তার পিতামাতার মধ্যে কেউ আগে স্বাধীন ভারতের নাগরিক ছিলেন | VIA |
একজন ব্যক্তি যিনি ভারতের বিদেশী নাগরিক কার্ডধারক হিসাবে নিবন্ধিত | VIIA |
ন্যাচারালাইজড বা প্রাকৃতিকীকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য | VIIIA |
ভারতীয় নাগরিকত্ব অনলাইন। সিএএ আবেদন
- অনলাইনে আবেদনের জন্য আপনাকে indiancitizenshiponline.nic.in তে যেতে হবে।
- হোম পেজের ওপর ‘Click to Submit Application for Indian Citizenship Under CAA, 2019’ তে ক্লিক করতে হবে।
- এরপর মোবাইল নম্বর ও ক্যাপচা পূরণ করে লগইন করার পর আপনাকে ফর্মটি যথাযত ভাবে পূরণ করে ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসগুলি সংযোজন করে সাবমিট করতে হবে।
- ফর্মের সাথে আপনাকে ৫০/- অনলাইন পেমেন্ট করতে হবে।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন ২০১৯ (সিএএ) সম্পর্কিত প্রশ্ন
সিএএ কি
সিএএ হল নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন যেটি ২০১৯ সালে পাস হয়েছিল এবং নিয়ম তৈরি করে ২০২৪ সালের ১১ই মার্চ তা লাগু করা হয়। এই আইন অনুযায়ী ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে বা তার আগে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে।
CAA কি কোনো প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিককে করতে হবে?
না, যারা ইতিমধ্যেই ভারতীয় নাগরিক তাদের ওপর সিএএ -এর কোন প্রভাব পড়বে না।
সিএএ-এর জন্য কি কি নথি প্রয়োজন?
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ বা সিএএ-এর আবেদনের জন্য আবেদককে তার নিজের দেশের কোন প্রমানপত্র দিতে হবে যেমন আফগানিস্থান, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের পাসপোর্ট, রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, রেসিডেন্সিয়াল পারমিট, জন্ম সার্টিফিকেট, স্কুল সার্টিফিকেট, সেই দেশের ইস্যু করা যে কোন লাইসেন্স, জমির রেকর্ড ইত্যাদি।
এছাড়া আবেদক যে ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ এর আগে ভারতে প্রবেশ করেছেন তার প্রমান স্বরূপ ভিসা, ভারত সরকার দ্বারা ইস্যু করা রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, রেশন কার্ড, জন্ম / বিবাহ সার্টিফিকেট, প্যান কার্ড, জমির রেকর্ড, ইলেক্ট্রিসিটি বিল ইত্যাদির ফটোকপি জমা করতে হবে।
ইসলাম ধর্মীরা কি ভাবে ভারতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন?
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ এর অধীনে ইসলাম ধর্মীরা কোনোরূপ সুবিধা পাবেন না। তাই তাদের ১৯৫৫ এর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অনুযায়ী আবেদনের জন্য কমপক্ষে ১১ বছর ভারতে বসবাস করার পর আবেদন করতে হবে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ অনুসারে আবেদন করতে হলে ন্যূনতম কত বছর ভারতে বসবাস করতে হয়?
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ২০১৯ অনুসারে ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৪ সালের মধ্যে পাকিস্তান, আফগানিস্তান কিংবা বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ও পার্সিরা ভারতীয় নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারেন। তবে শর্ত হল যে, আবেদন করার জন্য তাদের অন্তত ৫ বছর ভারতে বসবাস করতে হবে (যা পূর্বে ছিল ১১ বছর) তাহলেই তারা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন।
কোন বিদেশী যদি ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে চায় তাহলে কোথায় এবং কিভাবে আবেদন করবেন?
আপনাকে নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ এর ধারা ৫ এবং ধারা ৬ এর যোগ্যতা অনুযায়ী যাচাই করতে হবে। এরপর অনলাইনে ফর্ম পূরণ করে ও সাথে প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করে এবং নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করতে হবে।