Updated on March 5th, 2025 ||
জীবন বীমা কর্পোরেশন বা LIC হল দেশের জনসাধারণের কাছে একটি সুপরিচিত ও নির্ভরযোগ্যতার প্রতিষ্ঠান, যার ২০৪৮টি ব্রাঞ্চ অফিস, ১,৫৮৪টি স্যাটেলাইট অফিস, ১,১৬৮টি মিনি অফিস রয়েছে এবং বর্তমানে এলআইসি গ্রাহক সংখ্যা হল প্রায় ২৫ কোটি।
বিভিন্ন জীবন বীমা কভারেজের সুবিধা থেকে শুরু করে নানা ধরণের সঞ্চয় প্রকল্প, এই এলআইসি আমাদের জীবনের পরিকল্পনাগুলিকে বাস্তবায়িত করতে প্রত্যক্ষ ভাবে সহায়তা করে।
এই নিবন্ধে এলআইসি জীবন লাভ প্ল্যান নং ৯৩৬ এর বৈশিষ্ট্য, মেয়াদ, প্রিমিয়ামের পরিমাণ, ডেথ বেনিফিট ইত্যাদি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হল।
এলআইসি জীবন লাভ পলিসি কি?
এলআইসি’র জীবন লাভ পলিসি নং ৯৩৬ হল পূর্বের পলিসি নং ৮৩৬ এর নতুন সংস্করণ যেটি ২০২০ সালে চালু করা হয়েছিল। এটি একটি নন্-লিঙ্কড এবং দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় প্রকল্প, যা গ্রাহকদের জীবন বীমা সুরক্ষার সাথে লোণের সুবিধা, ইন্সটলমেন্ট রূপে ম্যাচুরিটির অর্থ লাভ প্রভৃতি বাড়তি সুবিধা প্রদান করে থাকে।
এই পলিসির মাধ্যমে আপনি বীমাকারী অর্থাৎ এলআইসি’র লাভে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। আপনার বোনাস LIC-এর কর্মক্ষমতার উপর নির্ভর করবে এবং তাই আগে থেকে সম্পূর্ণ লাভের অঙ্ক এক্ষেত্রে জানানো সম্ভব না।
এই পলিসিটি ছেলেমেয়েদের শিক্ষা, বিয়ে বা অবসর গ্রহনের সময়ের সঞ্চয়ের জন্য সব চেয়ে কার্যকারী। এই প্ল্যানটি নন-লিঙ্কড, অর্থাৎ এটি বাজারের ওঠানামা দ্বারা প্রভাবিত হয় না তাই এটি স্থিতিশীল ও নিশ্চিত রিটার্ন প্রদান করে থাকে।
জীবন লাভ পলিসির গ্রাহক মেয়াদপূর্তির সময় এককালীন অর্থ লাভ করে থাকেন, অন্যথা পলিসিধারকের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে।

এলআইসি জীবন লাভ পলিসি বিবরণ
জীবন লাভ পলিসির বিবরণ নিম্নবর্তী সারণীতে উল্লেখ করা হলঃ
পলিসির নাম | এলআইসি জীবন লাভ |
প্ল্যান নং | ৯৩৬ |
ইউআইএন নং | 512N304V02 |
শুরু হয়েছিল | ২০২০ সালে |
পলিসি শুরুর ন্যূনতম বয়স | ৮ বছর |
পলিসি শুরুর সর্বোচ্চ বয়স | ৫৯ বছর |
সর্বোচ্চ ম্যাচুরিটি বয়স | ৭৫ বছর |
পলিসি সময়সীমা | ১৬, ২১ এবং ২৫ বছর |
প্রিমিয়াম প্রদানের মেয়াদ | ১০, ১৫ এবং ১৬ বছর |
প্রিমিয়াম প্রদানের ধরণ | মাসিক, ত্রৈমাসিক, অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক |
সর্বনিম্ন রাশি | ₹২ লক্ষ |
সর্বোচ্চ রাশি | কোন সীমা নেই |
এলআইসি জীবন লাভের মূল বৈশিষ্ট্য
জীবন লাভ পলিসিটির মূল বৈশিষ্ট্যগুলি নিচে তালিকাভুক্ত করা হলঃ
জীবন বীমা সুরক্ষাঃ
এলআইসি জীবন লাভ পলিসি চলাকালীন গ্রাহক জীবন বীমা কভারেজ পাবেন অর্থাৎ পলিসিধারকের অকাল মৃত্যু হলে তার পরিবার আর্থিক নিরাপত্তার সুবিধা পাবে।
ম্যাচুরিটির সুবিধাঃ
এই পলিসির ম্যাচুরিটিতে পলিসিধারক মূল বীমাকৃত অর্থ, জমা হওয়া বোনাস এবং সাথে অতিরিক্ত বোনাস লাভ করবেন।
সীমিত প্রিমিয়ামঃ
জীবন লাভ পলিসিতে প্রিমিয়াম পরিশোধের মেয়াদকাল পলিসির মেয়াদকালের চেয়ে কম অর্থাৎ পলিসির সম্পূর্ণ মেয়াদকাল জুড়ে গ্রাহককে প্রিমিয়াম জমা করতে হয় না।
নমনীয় শর্তাবলীঃ
এলআইসি জীবন লাভ পলিসিতে তিন ধরণের মেয়াদের বিকল্প রয়েছে যথাক্রমে ১৬, ২১ এবং ২৫ বছর। পলিসির নির্বাচিত মেয়াদের উপর নির্ভর করে প্রিমিয়াম পরিশোধের মেয়াদগুলি হল যথাক্রমে ১০, ১৫ এবং ১৬ বছর।
পলিসি মেয়াদ | প্রিমিয়াম পরিশোধের মেয়াদ | পলিসি শুরুর সর্বোচ্চ বয়স |
১৬ বছর | ১০ বছর | ৫৯ বছর |
২১ বছর | ১৫ বছর | ৫৪ বছর |
২৫ বছর | ১৬ বছর | ৫০ বছর |
প্রিমিয়াম পরিশোধের ধরনঃ
এই পলিসিতে আপনি বার্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক, ত্রৈমাসিক বা প্রতি মাসিক কিস্তিতে প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে পারবেন।
ঋণ সুবিধাঃ
জীবন লাভ পলিসিতে ২ বছরের প্রিমিয়াম প্রদান করার পর আপনি এই কভারেজের উপর ঋণ নিতে পারবেন।
এলআইসি জীবন লাভ যোগ্যতার মানদণ্ড
এই পলিসির যোগ্যতার মানদণ্ডগুলি নিচে উল্লেখ করা হলঃ
মিনিমাম বেসিক সাম অ্যাসুয়োরড্ | ₹২ লক্ষ টাকা |
ম্যাক্সিমাম বেসিক সাম অ্যাসুয়োরড্ | কোন সীমা নেই |
পলিসি টার্ম | ১৬, ২১, ২৫ বছর |
প্রিমিয়াম পেয়িং টার্ম | ১০, ১৫, ১৬ বছর |
পলিসি শুরুর সর্বনিম্ন বয়স | ৮ বছর |
পলিসি শুরুর সর্বোচ্চ বয়স | ১৬ বছর পলিসি টার্মের ক্ষেত্রে ৫৯ বছর২১ বছর পলিসি টার্মের ক্ষেত্রে ৫৪ বছর২৫ বছর পলিসি টার্মের ক্ষেত্রে ৫০ বছর |
সর্বোচ্চ ম্যাচুরিটি বয়স | ৭৫ বছর |
এলআইসি জীবন লাভ পলিসি সুবিধা
জীবন লাভ পলিসির অধীনে আপনি নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পাবেনঃ
ডেথ বেনিফিটঃ
জীবন লাভ পলিসির মেয়াদ চলাকালীন যদি বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যু হয় তবে ‘সাম অ্যাসুয়োরড্ অন ডেথ’ বা ‘মৃত্যুর উপর বীমাকৃত অর্থরাশি’ এবং সাথে সরল প্রতিবর্তনমূলক বোনাস এবং চূড়ান্ত অতিরিক্ত বোনাস দেওয়া হয়ে থাকে।
এই ডেথ বেনিফিটের পরিমাণ মোট প্রদত্ত প্রিমিয়ামের ১০৫% বা তার বেশি হয়, অথবা বার্ষিক প্রিমিয়ামের ৭ গুণ পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়ে থাকে।
ম্যাচুরিটি বেনিফিটঃ
বীমাধারক সম্পূর্ণ পলিসির মেয়াদকাল সম্পন্ন করলে এবং পলিসির প্রিমিয়াম পরিশোধ করে থাকলে তিনি মেয়াদপূর্তির সুবিধা বা ম্যাচুরিটি বেনিফিট পাবেন, যা হল মূল বীমাকৃত অর্থের সাথে অর্পিত সরল রিভার্সনারি বোনাস এবং সাথে চূড়ান্ত অতিরিক্ত বোনাস।
ট্যাক্স বেনিফিটঃ
এলআইসি জীবন লাভ পলিসিতে আয়কর আইনের ধারা 80C এবং 10(10D) এর অধীনে কর ছাড়ের সুবিধা রয়েছে। প্রতি আর্থিক বছরে সর্বাধিক ₹১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রিমিয়ামের পরিমাণে সম্পূর্ণ কর ছাড় পাওয়া যায়, এছাড়া পলিসির ম্যাচুরিটির পরিমাণও সম্পূর্ণ কর মুক্ত রাখা হয়েছে।
রাইডার বেনিফিটঃ
জীবন লাভ পলিসির অধীনে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম প্রদানের মাধ্যমে পাঁচটি ঐচ্ছিক রাইডার পাওয়া যায়। আপনি বেস প্ল্যানের সাথে রাইডার সুবিধাগুলি নিয়ে পলিসির কভারেজ বাড়াতে পারবেন।
দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু এবং অক্ষমতা সুবিধা রাইডার
পলিসির মেয়াদ চলাকালীন যে কোনও সময় এই রাইডারটি নেওয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে প্রিমিয়াম পরিশোধের অবশিষ্ট মেয়াদ কমপক্ষে পাঁচ বছর থাকতে হবে, এছাড়া এই পাঁচ বছরে পলিসিধারকের বয়স ৭০ বছর পূর্ণ হওয়া উচিত নয়।
এই রাইডারের অধীনে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে, দুর্ঘটনার সুবিধার পরিমাণ এককালীন অর্থ প্রদান করা হবে। দুর্ঘটনাজনিত অক্ষমতার ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার তারিখ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে দুর্ঘটনার সুবিধার পরিমাণের সমপরিমাণ অর্থ ১০ বছর ধরে সমান মাসিক কিস্তিতে প্রদান করা হবে। যদি পলিসিধারক এই মেয়াদের মধ্যে মারা যান অথবা পলিসির মেয়াদ ১০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে অবশিষ্ট কিস্তিগুলি পরিকল্পনার অধীনে উল্লিখিত অক্ষমতা অথবা মৃত্যু সুবিধার সাথে এককালীনভাবে প্রদান করা হবে।
দুর্ঘটনার সুবিধার পরিমাণের জন্য ভবিষ্যতের প্রিমিয়াম এবং মূল পলিসির অধীনে প্রাথমিক বীমাকৃত অর্থের অংশের প্রিমিয়াম যা পলিসির অধীনে দুর্ঘটনার সুবিধার পরিমাণের সমান, তা ছাড় দেওয়া হবে।
দুর্ঘটনাজনিত বা অ্যাক্সিডেন্টাল বেনিফিট রাইডার
এই রাইডারটিও নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক বয়স হল ৬৫ বছর, অর্থাৎ প্রিমিয়াম পরিশোধের মেয়াদ মিলিয়ে পলিসিধারকের সর্বোচ্চ বয়স ৭০ বছর হতে পারে।
এই রাইডারের কভারেজ শুধুমাত্র প্রিমিয়াম পরিশোধের মেয়াদ চলাকালীনই পাওয়া যাবে। এই রাইডারের অধীনে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে অ্যাক্সিডেন্টাল বেনিফিট রূপে এককালীন অর্থ প্রদান করা হবে।
মেয়াদী নিশ্চয়তা বা টার্ম অ্যাসুরেন্স রাইডার
এই রাইডারটি শুধুমাত্র পলিসির শুরুতেই নেওয়া যায় এবং এই রাইডারের কভারেজ পলিসির মেয়াদকাল চলাকালীন পাওয়া যাবে। এই রাইডারের ক্ষেত্রে পলিসির মেয়াদকালে বীমাকৃত ব্যক্তির মৃত্যু হলে বীমাকৃত অর্থরাশির সমপরিমাণ অর্থ নমিনিকে দেওয়া হবে।
গুরুতর অসুস্থতা বা নিউ ক্রিটিক্যাল ইলনেস বেনিফিট রাইডার
এই রাইডারটিও শুধুমাত্র পলিসির শুরুতেই নেওয়া যেতে পারে। এই রাইডারের কভারেজ শুধুমাত্র পলিসির মেয়াদকালেই পাওয়া যাবে। এই রাইডারটি নেওয়া হলে এই রাইডারের আওতায় উল্লেখিত ১৫টি গুরুতর অসুস্থতার মধ্যে যেকোনো একটির গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রে বীমাকৃত ব্যক্তিকে অর্থ প্রদান করা হবে।
প্রিমিয়াম মকুব বা প্রিমিয়াম ওয়েভার বেনিফিট রাইডার
এই রাইডারটি শুধুমাত্র নাবালক বীমাধারকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এবং এটি পলিসির প্রিমিয়ামের মেয়াদকালের যে কোন সময় নেওয়া যেতে পারে, তবে প্রিমিয়ামের পরিশোধকাল কমপক্ষে ৫ বছর বাকি থাকতে হবে। রাইডার মেয়াদের সাথে প্রস্তাবকের বয়স মিলিয়ে যদি ৭০ বছরের বেশি হয়, তাহলে রাইডারটি অনুমোদিত হবে না।
এই রাইডারের ক্ষেত্রে বীমাকারির মৃত্যু হলে মৃত্যুর তারিখের পরে রাইডারের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মূল পলিসির প্রিমিয়াম পরিশোধ মকুব করা হবে। তবে এক্ষেত্রে যদি মূল পলিসির প্রিমিয়াম পরিশোধের মেয়াদ রাইডারের মেয়াদ অতিক্রম করে থাকে, তাহলে এই প্রিমিয়াম ওয়েভার বেনিফিট রাইডার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ থেকে মূল পলিসির বাকি থাকা প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে অন্যথা পলিসিটি ‘পেইড-আপ’ হয়ে যাবে।
এলআইসি জীবন লাভ প্রিমিয়াম চার্ট
নিচে জীবন লাভ পলিসির অধীনে ২ লক্ষ টাকার বেসিক সাম অ্যাস্যুরডের একটি বার্ষিক প্রিমিয়াম হারের নমুনা দেওয়া হলঃ
বয়স | পলিসির মেয়াদ (প্রিমিয়াম পরিশোধের মেয়াদ) | ||
১৬ (১০) | ২১ (১৫) | ২৫ (১৬) | |
২০ | ₹১৬,৬৯৯/- | ₹১০,৬৮২/- | ₹৯,০০৬/- |
৩০ | ₹১৬,৭৫৮/- | ₹১০,৭৭০/- | ₹৯,১৩৪/- |
৪০ | ₹১৭,০১৩/- | ₹১১,১৩৩/- | ₹৯,৫৮৪/- |
৫০ | ₹১৭,৮২৬/- | ₹১২,১২৩/- | ₹১০,৭৪১/- |
এলআইসি জীবন লাভ পলিসির অন্যান্য সুবিধা
নীচে জীবন লাভ পলিসির আরও কিছু সুবিধা উল্লেখ করা হল যা সাধারনত এলআইসির বাকি প্ল্যানগুলিতেও উপলব্ধ থাকেঃ
রিবেট্সঃ
পলিসিধারক যত বেশি মূল্যের বেসিক সাম অ্যাস্যুরডের পলিসি করাবেন, ততটাই বেশি তিনি রিবেট বা ছাড় পাবেন, এছাড়া প্রিমিয়াম প্রদানের ধরণের ওপরেও রিবেটের পরিমাণ নির্ভর করে।
বেসিক সাম অ্যাস্যুরড | রিবেটের পরিমাণ |
₹১৫,০০,০০০ ও তার বেশি | ১.৭৫% |
₹১০,০০,০০০ – ₹১৪,৯০,০০০/- | ১.৫% |
₹৫,০০,০০০ – ₹৯,৯০,০০০/- | ১.২৫% |
₹২,০০,০০০ – ₹৪,৯০,০০০/- | নেই |
কিস্তি পরিশোধের ধরণ | রিবেটের পরিমাণ |
বার্ষিক | ট্যাবুলার প্রিমিয়ামের ২% |
অর্ধ-বার্ষিক | ট্যাবুলার প্রিমিয়ামের ১% |
ত্রৈমাসিক | নেই |
মাসিক | নেই |
গ্রেস পিরিয়ডঃ
পলিসির প্রিমিয়াম পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রথম অপরিশোধিত প্রিমিয়ামের তারিখ থেকে বার্ষিক, অর্ধ-বার্ষিক, ত্রৈমাসিক পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম পরিশোধের জন্য ৩০ দিন এবং মাসিক পদ্ধতিতে প্রিমিয়াম পরিশোধের জন্য ১৫ দিন সময়সীমা দেওয়া হয়। যদি গ্রেসের দিনগুলি শেষ হওয়ার আগে প্রিমিয়াম পরিশোধ না করা হয়, তাহলে পলিসিটি বাতিল হয়ে যাবে এবং এই গ্রেস পিরিয়ডটি মূল পলিসির প্রিমিয়ামের সাথে প্রদেয় রাইডার প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
লোন সুবিধাঃ
জীবন লাভ পলিসিতে যদি কমপক্ষে দুই বছরের প্রিমিয়াম পরিশোধ করা হয়ে থাকে তবে এই পলিসির অধীনে ঋণ নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে লোন নেওয়ার পরিমাণ পলিসির অবস্থার ওপর নির্ভর করবে যেমন প্রিমিয়াম পরিশোধ যদি নিয়ম মেনে করা হয়ে থাকে অর্থাৎ চলতি পলিসির ক্ষেত্রে ৯০% পর্যন্ত এবং পেইড-আপ পলিসির ক্ষেত্রে ৮০% পর্যন্ত লোন নেওয়া যাবে। এই লোণের প্রযোজ্য সুদের হার ‘ভারতের বীমা নিয়ন্ত্রক ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ বা IRDAI দ্বারা অনুমোদিত হবে।
ফ্রি-লুক পিরিয়ডঃ
পলিসিধারক যদি পলিসির নিয়ম ও শর্তাবলী নিয়ে সন্তুষ্ট না হন, তবে পলিসি বন্ড প্রাপ্তির তারিখ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অসুন্তুষ্টির কারন উল্লেখ করে পলিসিটি কর্পোরেশনে ফেরত পাঠাতে পারবেন। সেক্ষেত্রে কর্পোরেশন নিয়ম মতো পলিসিটি বাতিল করবে এবং কভারের সময়কালের জন্য আনুপাতিক ঝুঁকি প্রিমিয়াম (বেস প্ল্যান এবং রাইডারগুলি) বাদ দিয়ে জমা করা প্রিমিয়ামের পরিমাণ ফেরত দেবে।
পেইড-আপ পলিসিঃ
পলিসিধারক যদি দুই বছরের কম সময়ের প্রিমিয়াম পরিশোধ করে থাকেন এবং পরবর্তী আর কোনও প্রিমিয়াম পরিশোধ না করা হয়, তাহলে প্রথম বকেয়া প্রিমিয়ামের তারিখ থেকে গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরে পলিসিটির সমস্ত সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে এবং কিছুই প্রদান করা হবে না।
তবে যদি কমপক্ষে দুটি পূর্ণ বছরের প্রিমিয়াম পরিশোধ করা হয়ে থাকে এবং পরবর্তী কোনও প্রিমিয়াম পরিশোধ না করা হলেও পলিসিটি সম্পূর্ণরূপে বাতিল হয়ে যাবে না, সেক্ষেত্রে পলিসিটির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটি পরিশোধিত পলিসি হিসেবে থেকে যাবে।
সেক্ষেত্রে বীমাকৃত অর্থের পরিমাণ হ্রাস পাবে এবং এই ‘ম্যাচুরিটি পেইড-আপ সাম অ্যাস্যুরড’ এর পরিমাণ যে প্রিমিয়াম ইতিমধ্যেই পরিশোধ করা হয়েছে তার ওপর গণনা করা হবে।
পলিসি রিভাইভাল বা পুনরুদ্ধারঃ
পলিসিটির প্রিমিয়াম যদি গ্রেস ডেস অফ অ্যাস্যুরডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পরিশোধ করা না হয়, তাহলে পলিসিটি বাতিল হয়ে যাবে। পলিসিটি পুনরায় চালু করতে হলে প্রথম বকেয়া প্রিমিয়ামের তারিখ থেকে ৫ বছরের মধ্যে সুদ সহ সমস্ত বকেয়া প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে।
সারেন্ডার ভ্যালুঃ
পলিসিধারক যদি পলিসিটি সারেন্ডার করে টাকা ফেরত নিতে চান তবে তাকে কমপক্ষে দুই বছরের প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে তবেই তিনি পলিসিটি সারেন্ডার করতে পারবেন। পলিসিটি সারেন্ডারের পর কর্পোরেশন গ্যারান্টেড সারেন্ডার মূল্য বা স্পেশাল সারেন্ডার মূল্যের সমান মূল্য প্রদান করবে। সেক্ষেত্রে পলিসির গ্যারান্টেড সারেন্ডারের মূল্য মোট প্রদত্ত প্রিমিয়ামের সমান হবে।
এলআইসি জীবন লাভ পলিসি সম্পর্কিত প্রশ্ন (FAQ)
এলআইসি জীবন লাভ পলিসিতে ডেথ বেনিফিট কিভাবে পাওয়া যাবে?
জীবন লাভ পলিসিতে পলিসিধারকের মৃত্যুর পর নমিনিকে পলিসিধারকের ডেথ সার্টিফিকেট, পলিসির বন্ড, নমিনির প্রমানপত্র নিয়ে পলিসি অফিসে যেতে হবে এবং ডেথ বেনিফিট ক্লেইম বা দাবী করতে হবে। এই কাজের জন্য নমিনি কোন এজেন্টের সাহায্য নিতে পারেন।
LIC জীবন লাভ পলিসির ম্যাচুরিটি ভ্যালু কত?
জীবন লাভ পলিসির ম্যাচুরিটি হলে পলিসিধারক বেসিক সাম অ্যাস্যুরড বা মূল বীমাকৃত অর্থের সাথে পলিসির মেয়াদকালে সঞ্চিত সরল প্রতিবর্ত বোনাস (SRB) এবং সাথে চূড়ান্ত অতিরিক্ত বোনাস (FAB) মিলিয়ে এককালীন মোটা অঙ্কের অর্থ লাভ করে থাকেন।
এলআইসি প্রিমিয়াম যদি গ্রেস পিরিয়ডের মধ্যে পরিশোধ না করা হয় তাহলে কী হবে?
এলআইসিতে যদি গ্রেস পিরিয়ডের মধ্যে প্রিমিয়াম পরিশোধ না করা হয় তাহলে পলিসিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাবে এবং পলিসিধারক কোন রকম সুবিধা পাবেন না। এলআইসি থেকে কোন রকম সুবিধা পেতে হলে পলিসিধারককে কমপক্ষে দুই বছরের প্রিমিয়াম পরিশোধ করে থাকতে হবে, সেক্ষেত্রে পলিসিটি পেইড-আপ পলিসি হয়ে যাবে অর্থাৎ প্রদান করা প্রিমিয়ামের পরিমানের ওপর পলিসির রিটার্ন নির্ভর করবে।