Updated on August 28th, 2024 ||
আমাদের দেশের মেয়েদের শিক্ষা ও সুরক্ষার ব্যাপারে অন্যান্য উন্নত দেশগুলির তুলনায় অনেক পরে নজর দেওয়া হলেও বর্তমানে ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকার এইদিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। কন্যা সন্তানের সুরক্ষার উদ্দেশ্যে করা ভারত সরকারের সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা যেমন উল্লেখযোগ্য, তেমনই হোল মেয়েদের শিক্ষার প্রসারের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের করা এই কন্যাশ্রী প্রকল্প।
ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির মতো পশ্চিমবঙ্গেও মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার বিষয়ে নিরুৎসাহিত এবং অল্প বয়সে তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার প্রবনতা দেখা যায়। ‘ডিস্ট্রিক্ট লেভেল হাউসহোল্ড এবং ফেসিলিটি সার্ভে-৩’ সমীক্ষা অনুযায়ী, শিশু বিবাহের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের স্থান হোল পঞ্চম। ২০০৭-০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে ১৮ বছরের কম বয়সি বিবাহিত মহিলার সংখ্যা হোল প্রায় ৫৪.৭৪ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের দিকে এই হার আরও বেশী মাত্রায় দেখা যায়।
অন্যদিকে ভারত সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ‘দ্য সিলেকটেড এডুকেশন্যাল স্ট্যাটিসটিক্স ২০১০-১১’ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর ছাত্রীদের মধ্যে স্কুলছুটের হার হোল ৬৩.৫ শতাংশ এবং ছাত্রদের মধ্যে ৬৪.৯ শতাংশ, যা ছাত্র এবং ছাত্রী উভয় ক্ষেত্রেই জাতীয় গড়ের চেয়ে বেশি।
তবে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কারন হিসেবে দেখা গেছে যে পড়াশোনার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অভাবের কারনে তারা স্কুল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে তাদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে কন্যাশ্রী প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে যার প্রধান উদ্দেশ্য হোল আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে রাজ্যের মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় উৎসাহিত করা এবং আঠারো বছর বয়সের আগে মেয়েদের বিবাহ বন্ধ করা।
সামাজিক গুরুত্ব, বৈশিষ্ট্য এবং সাফল্যের জন্য কন্যাশ্রী প্রকল্প বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে মেয়েদের শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে।
কন্যাশ্রী প্রকল্প কত সালে চালু হয়
কন্যাশ্রী প্রকল্পটি ২০১৩ সালের ১৪ই আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘মহিলা উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ বিভাগ’ এর অধীনে চালু করা হয়েছিল। তাই এই দিনটিকে কন্যাশ্রী দিবস রূপে পালন করা হয়। এই প্রকল্পের অধীনে প্রতি বছর প্রায় ১৮ লক্ষ মেয়ে শিক্ষার্থী বার্ষিক বৃত্তি পেয়ে থাকে।
কন্যাশ্রী প্রকল্প বিবরণ
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে তালিকাভুক্ত করা হলঃ
প্রকল্পের নাম | কন্যাশ্রী প্রকল্প |
প্রকল্প শুরুর বছর | ২০১৩ |
প্রকল্পের ধরণ | পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্কিম |
দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ | মহিলা উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ বিভাগ |
সুবিধাভোগী | রাজ্যের ১৩ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সী সকল ছাত্রী এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্র্যাজুয়েশনের পরবর্তী শিক্ষা পর্যন্ত |
বৃত্তির শ্রেণী | K1, K2 এবং K3 |
উদ্দেশ্য | আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে রাজ্যের মেয়েদের লেখাপড়ায় উৎসাহ দেওয়া এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবাহ রোধ করা |
আর্থিক সহায়তার পদ্ধতি | সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠান হবে |
সরকারী ওয়েবসাইট | https://www.wbkanyashree.gov.in/ |
কন্যাশ্রী প্রকল্প উদ্দেশ্য
কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের মেয়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার সাথে সাথে আরও বৃহত্তর উদ্দেশ্য সাধন করা সম্ভব হয়েছে। নিচে সেগুলি তালিকাবদ্ধ করা হলঃ
- এই প্রকল্পের সহায়তার ফলে রাজ্যের মেয়েরা দীর্ঘ সময়ের জন্য তাদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারছে এবং সেক্ষেত্রে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, গ্র্যাজুয়েশন এবং গ্র্যাজুয়েশনের পরবর্তী মাস্টার্স শিক্ষা পর্যন্ত তারা এই সহায়তা লাভ করবে, যার ফলে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই সুরক্ষা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।
- কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে মেয়েদের বিয়ের বৈধ বয়সের আগে বিবাহকে নিরুৎসাহিত করা সম্ভব হয়েছে, যার ফলে প্রাথমিক গর্ভধারণের ঝুঁকি, অপুষ্টি বা দুর্বল স্বাস্থ্য এবং মা ও শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি প্রভৃতি হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে।
- প্রকল্পের আর্থিক সহায়তার টাকা সরাসরি মেয়েদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠান হয় তাই এই অর্থ ব্যবহারের সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নিতে পারে, যা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী এবং সঞ্চয়ী মনভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করছে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা
কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীনে পূর্বে k1 এবং k2 এই দুটি স্কলারশিপের টাকা পাওয়া যেত, বর্তমানে এর সাথে k3 স্কলারশিপ সংযোজন করা হয়েছে। এবার দেখে নেওয়া যাক কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীনে কোন ক্ষেত্রে কত টাকা পাওয়া যায়ঃ
কন্যাশ্রী প্রকল্প k1
কন্যাশ্রী প্রথম বা k1 স্কলারশিপের ক্ষেত্রে ১৩ থেকে ১৮ বছর (অষ্টম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর সমতুল্য) বয়সী মেয়েদের বার্ষিক ₹১০০০/- টাকা প্রদান করা হবে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের অবিবাহিত থাকতে হবে।
কন্যাশ্রী প্রকল্প k2
দ্বিতীয়টি বা k2 স্কলারশিপ হল এককালীন অনুদান ₹২৫,০০০/- টাকা, যা মেয়ের ১৮ বছর বয়সের পরে প্রদান করা হবে, যদি সে অবিবাহিত এবং উচ্চ শিক্ষার বা কোন পেশাগত কাজের শিক্ষায় নিযুক্ত থাকে।
কন্যাশ্রী প্রকল্প k3
k3 স্কলারশিপটি হোল স্নাতক অর্জনকারী মেয়েদের জন্য এবং যারা আরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। এক্ষেত্রে বিজ্ঞান অধ্যয়নরত সমস্ত মেয়েদের প্রতি মাসে ₹২,৫০০/- টাকা এবং বানিজ্য ও কলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে ₹২,০০০/- টাকা বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে।
কন্যাশ্রী প্রকল্প কারা পাবে
এটি হোল একটি স্কলারশিপ অনুদান, তাই প্রকৃত প্রাপকের এই অনুদানের অর্থ পাওয়াই হোল কাম্য। যাদের লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহায়তার প্রকৃতই প্রয়োজন এবং পরিবারের চাপে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যাতে বিয়ে না দেওয়া হয় সেদিকে নজর রেখেই এই স্কলারশিপের গঠন করা হয়েছে।
এবার দেখে নেওয়া যাক কন্যাশ্রী প্রকল্প কারা পাবে-
- কন্যাশ্রী প্রকল্পের ক্ষেত্রে আবেদনকারী মেয়েটিকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- আবেদনকারী যেন ক্লাস ৮ থেকে ১২ শ্রেণী বা সমমানের শিক্ষার্থী হয়।
- যদি আবেদনকারী ৪০% বা তার বেশি অক্ষমতা থাকে তবে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণী বিচার্য নয় এবং সেক্ষেত্রে অক্ষমতার সার্টিফিকেট লাগবে।
- তার পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম হতে হবে।
- যদি আবেদনকারীর পিতা-মাতা উভয়েরই মৃত্যু হয়ে থাকে, বা আবেদনকারী যদি বর্তমানে জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট ২০০০ এর অধীনে নিবন্ধিত থাকে, অথবা ৪০% বা তার বেশি অক্ষমতা থাকে তবে তার পরিবারের বার্ষিক আয় বিচার্য নয়।
- k3 বৃত্তির জন্য শুধুমাত্র যারা কন্যাশ্রী k2 প্রকল্পের আবেদন করেছেন তারাই অনলাইনে রেজিস্টার করতে পারবেন। কন্যাশ্রী k3 বৃত্তির জন্য, আবেদনকারীকে অবশ্যই শেষ স্নাতক পরীক্ষায় কমপক্ষে ৪৫% মার্ক্স রাখতে হবে। কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মেয়েরা এই k3 বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে, এবং এই বৃত্তির ক্ষেত্রে বয়সের কোন ঊর্ধ্বসীমা নেই।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা
কন্যাশ্রী প্রকল্পের দ্বারা নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পাওয়া সম্ভব হয়েছেঃ
- মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় উৎসাহিত করাঃ কন্যাশ্রী প্রকল্পের দ্বারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পরিবারের মেয়েদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে।
- স্কুল ড্রপআউটের হার কমঃ কন্যাশ্রী অনুদানের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে শর্তসাপেক্ষ নগদ প্রদানের ফলে মেয়েদের স্কুলছুটের হার কমানো সম্ভব হয়েছে।
- অপ্রাপ্তবয়স্ক বিবাহ রোধঃ কন্যাশ্রী প্রকল্প অপ্রাপ্তবয়স্ক বা বাল্যবিবাহ রোধের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই প্রকল্পের ফলে তারা পারিবারিক চাপে বিয়ে করার হাত থেকে নিস্তার পেয়েছে এবং তাদের শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
- মেয়েদের আর্থিক স্বাবলম্বী করাঃ এই প্রকল্পের k1, k2, k3 স্কলারশিপের অধীনে যথাক্রমে বার্ষিক ₹১,০০০/-, এককালীন ₹২৫,০০০/- এবং মাসিক ₹২,০০০-₹২,৫০০/- টাকা সরাসরি উপভোক্তা মেয়ের নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়, যা তাদের আর্থিক রূপে স্বাবলম্বী করে তুলতে সাহায্য করে।
- মেয়েদের অবস্থার উন্নতিঃ এই প্রকল্পের সাহায্যে পশ্চিমবঙ্গের মেয়েদের তথা সমাজের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে তাদের আত্মসম্মান ও অবস্থার উন্নতি এবং একটি ভালো ভবিষ্যত তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ কন্যাশ্রী প্রকল্পের আবেদন প্রক্রিয়া
এই প্রকল্পে আবেদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিচে উল্লেখ করা হলঃ
- কন্যাশ্রী প্রকল্পের আবেদনপত্র ছাত্রীরা তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই সংগ্রহ করতে পারবে।
- আবেদনপত্রে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য যেমন ‘আবেদনকারীর প্রাথমিক বিবরণ’ অর্থাৎ নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, আধার কার্ড নম্বর ইত্যাদি, এরপর ‘আবেদনকারীর যোগাযোগের বিবরণ’ যেমন জেলা, রাস্তা, থানা, ডাকঘর, স্থায়ী ঠিকানা প্রভৃতি, তারপর ‘ব্যাঙ্কের বিশদ বিবরণ’ যেমন ব্যাঙ্কের নাম, শাখার নাম, আইএফএস কোড ইত্যাদি বিবরণ লিখে আবেদনকারীকে স্বাক্ষর করতে হবে।
- এরপর আবেদনপত্রের সাথে জরুরী যেসব নথির প্রতিলিপি জমা দেওয়া হবে সেগুলিকে উল্লেখ করতে হবে যেমন জন্ম সার্টিফিকেট, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই ইত্যাদি টিক চিহ্ন দিয়ে নিচে আবেদনকারী এবং আইনি অভিভাবককে স্বাক্ষর করতে হবে।
- ফর্মটি সম্পূর্ণ পূরণ করা হয়ে গেলে সংযুক্ত নথিগুলি সহ আবেদনকারীর নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তা জমা করতে হবে।
- আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর তা বিভাগীয় প্রধান দ্বারা যাচাই করা হবে এবং নথিগুলি সঠিক হওয়ার উপর একটি অফিসিয়াল স্ট্যাম্প লাগানো হবে।
- তারপর বিভাগীয় প্রধানের দ্বারা একটি স্বীকৃতি স্লিপ দেওয়া হবে, যেখানে আবেদন নম্বর, নাম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিবরণগুলি থাকবে। ভবিষ্যতে রেফারেন্সের জন্য এই স্বীকৃতি স্লিপটি অবশ্যই রাখতে হবে।
- আবেদনটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা যাচাই ও অনুমোদিত হওয়ার পর, আবেদনকারীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্কলারশিপের টাকা স্থানান্তর করা হবে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলি কী কী?
পশ্চিমবঙ্গ কন্যাশ্রী প্রকল্পে আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথিগুলির তালিকা দেওয়া হলঃ
- আবেদনকারীর নিজের বা তার বাবা-মা, অভিভাবক বা জুভেনাইল জাস্টিস হোম দ্বারা প্রদত্ত অবিবাহিত হওয়ার স্বাক্ষর করা ঘোষণাপত্র।
- বার্ষিক পারিবারিক আয়ের প্রমান
- জন্ম সার্টিফিকেট
- আধার কার্ড
- স্কুল সার্টিফিকেট বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নথিভুক্ত হওয়ার প্রমাণ
- আবেদনকারীর রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ব্যাঙ্কের পাসবইয়ের প্রথম পাতার প্রতিলিপি
- অক্ষমতার সার্টিফিকেট (যদি প্রযোজ্য হয়)
কন্যাশ্রী প্রকল্প স্ট্যাটাস চেক
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পরে, আবেদনকারীরা নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে আবেদনের স্ট্যাটাস চেক করতে পারবেনঃ
- প্রথমে আপনাকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট wbkanyashree.gov.in খুলতে হবে।
- ওপরেই ‘Track Application’ লেখাটি দেখতে পাবেন, সেখানে ক্লিক করতে হবে।
- এই পেজে আপনাকে প্রথমে বছর, কোন স্কলারশিপ, এপ্লিকেশন আইডি, জন্ম তারিখ এবং ক্যাপচা পূরণ করে সাবমিট করলেই স্ট্যাটাসটি দেখা যাবে ।
কন্যাশ্রী প্রকল্প k3 আবেদন
কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীনে এই k3 স্কলারশিপটি নতুন এবং এর আবেদন অনলাইনেই করা সম্ভব। এটি ‘স্বামী বিবেকানন্দ মেরিট কাম মিন্স্ স্কলারশিপ’ (SVMCM) বা বিকাশ ভবন স্কলারশিপ থেকেই দেওয়া হয়ে থাকে।
K3 আবেদনের শর্তাবলি
কন্যাশ্রী k3 আবেদনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত শর্তগুলি প্রযোজ্যঃ
- k3-এর আবেদনের জন্য আবেদনকারীদের কন্যাশ্রী K2 থাকা আবশ্যিক এবং K2 তে আবেদনের বছর, কন্যাশ্রী আইডি, আবেদনকারীর নাম, জন্ম তারিখ ইত্যাদি যাচাই করার পরেই K3 আবেদনের ফর্মটি পূরণ করা যাবে।
- বিজ্ঞান/কলা/বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর পড়া ছাত্রী যাদের কন্যাশ্রী (K2) আইডি নেই, তাদের পাবলিক ইনস্ট্রাকশন বিভাগের অধীনে আবেদন করতে হবে।
- বিদ্যমান সুবিধাভোগীদের পুনর্নবীকরণের জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন নেই। তারা পূর্ববর্তী আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন করতে পারবে।
কন্যাশ্রী k3 আবেদনের প্রয়োজনীয় নথি
k3 আবেদনের জন্য নিম্নলিখিত নথিগুলির PDF থাকা আবশ্যিক এবং সাইজ সর্বাধিক 400KB পর্যন্ত হতে পারে।
নতুন আবেদনের ক্ষেত্রেঃ
- মাধ্যমিক পরীক্ষার মার্কশিট (উভয় দিক)
- গত বোর্ড/কাউন্সিল/বিশ্ববিদ্যালয়/কলেজ পরীক্ষার মার্কশিট (উভয় দিক)
- ভর্তির রশিদ
- আধার আইডি/ভোটার আইডি/রেশন কার্ড/সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা ইস্যু করা ঠিকানা প্রমান
- ব্যাঙ্ক পাসবুকের ১ম পাতার স্ক্যান কপি (অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং IFSC কোড সহ)
- যদি কোন বছরের ব্যবধান থাকে তবে কারণ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের চিঠি
পুনর্নবীকরণ আবেদনের ক্ষেত্রেঃ
- শেষ পরীক্ষার বা সেমিস্টারের উভয় দিক মার্কশিটের কপি
- পরবর্তী উচ্চ শ্রেণীতে ভর্তির রশিদ
k3 স্কলারশিপের জন্য আবেদনের প্রক্রিয়াটি নিচে উল্লেখ করা হলঃ
- কন্যাশ্রী k3 তে আবেদনের জন্য সরকারী অফিসিয়াল সাইট SVMCM -এ যেতে হবে।
- ওয়েবসাইটের ওপরের মেনু থেকে ‘Registration’ -এ ক্লিক করতে হবে।
- এরপর দুটি বিকল্প আসবে (i) Topper ও (ii) Non-Topper, সেক্ষেত্রে কন্যাশ্রী k3 এর জন্য ‘Non-Topper’ সিলেক্ট করতে হবে।
- তারপর আপনি k3 আবেদনের পদ্ধতি লেখা একটি পেজে পৌঁছাবেন, যেখানে অনলাইন আবেদন সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য ও শর্তাবলি দেওয়া থাকবে, সেটি যথাযত ভাবে পড়ে নিয়ে টিক চিহ্নে ক্লিক করে ‘Proceed for Registration’ এ ক্লিক করতে হবে।
- এরপর আপনি ‘Registration Category’ পেজে পৌঁছাবেন, যেখানে ‘KANYASHREE(K3)’ এর ‘Apply For Fresh Application’ এ ক্লিক করতে হবে।
- আপনার কাছে স্কলারশিপের রেজিস্ট্রেশনের ফর্মটি খুলে যাবে, যা আপনাকে যথাযত পূরণ করে ‘Register’ বাটনে ক্লিক করতে হবে। এরপর আপনার ওটিপি ভ্যারিফিকেশনের মাধ্যমে মোবাইল নম্বরটি চেক হবে।
- এরপর রেজিস্ট্রেশনের স্লিপ জেনারেট হবে যেটি অবশ্যই ডাউনলোড করতে রাখবেন।
- রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করার পর আপনাকে ওপরের মেনু থেকে ‘Applicant Login’ এ ক্লিক করতে হবে এবং এপ্লিকেশন আইডি ও রেজিস্টার করার সময় যে পাসওয়ার্ড দিয়েছেন তা দিয়ে লগইন করতে হবে।
- এরপর ‘Edit Profile’-এ ক্লিক করে আপনাকে বিস্তারিত তথ্য এবং উপরে উল্লিখিত সমস্ত নথির PDF আপলোড করে ‘Submit Application’ -এ ক্লিক করলে আবেদনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। আপনি ‘Download Application Details’-এ ক্লিক করে আবেদনপত্রটি ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করে রাখতে পারেন।
কন্যাশ্রী প্রকল্পে যোগাযোগের ঠিকানা
কন্যাশ্রী প্রকল্প সম্পর্কিত কোন সহায়তার জন্য সর্বপ্রথম আপনি স্কুল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কথা বলতে পারেন, তবে জরুরী তথ্য পাওয়ার জন্য আপনাকে BDO/SDO অফিসে যেতে হতে পারে।
এছাড়া আপনি নিচে প্রদত্ত নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেনঃ
টেলিফোনঃ 033-23373846
ই-মেইলঃ support.kanyashree@nic.in
কন্যাশ্রী প্রকল্প সম্পর্কিত প্রশ্ন
কন্যাশ্রী প্রকল্প কি?
কন্যাশ্রী প্রকল্প হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি স্কলারশিপ, যার উদ্দেশ্য হোল আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবারের মেয়েদের আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে তাদের উচ্চ শিক্ষায় উৎসাহিত করা এবং ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে দেওয়া থেকে বিরত করে সমাজের একটি সম্মানজনক অবস্থা প্রদানে সহায়তা করা।
কন্যাশ্রী প্রকল্প কত থেকে কত বছর পর্যন্ত?
কন্যাশ্রী প্রকল্পের অধীনে মোট ৩টি বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রথমটি k1, যার বয়স সীমা হোল ১৩ থেকে ১৮ বছর। দ্বিতীয়টি হোল k2, যা হোল ১৮ বছরের পর উচ্চ শিক্ষা এবং অবিবাহিত থাকলে তবেই পাওয়া যায়, এবং তৃতীয় k3 এর ক্ষেত্রে কোন বয়স সীমা নেই, যা স্নাতকোত্তর পড়াশোনার ক্ষেত্রে পাওয়া যায়।
কন্যাশ্রী প্রকল্পে প্রাপকের সর্বনিম্ন বয়স কত হতে হবে?
কন্যাশ্রী প্রকল্পের k1 এর জন্য সর্বনিম্ন বয়স হোল ১৩ বছর।
কন্যাশ্রী K1, K2 এবং K3 কি?
কন্যাশ্রী প্রকল্পের K1, K2 এবং K3 হোল ৩ টি বৃত্তির নাম। K1 হোল ১৩ থেকে ১৮ বছরের স্কুলের ছাত্রীদের জন্য বার্ষিক ₹১,০০০/- টাকার স্কলারশিপ। K2 বৃত্তিটি হোল মেয়েদের ১৮ বছর বয়সের পরে অবিবাহিত থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রে এককালীন ₹২৫,০০০/- টাকার স্কলারশিপ এবং K3 হোল স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য মাসিক সর্বাধিক ₹২,৫০০/- টাকার স্কলারশিপ।
কন্যাশ্রী দিবস কবে পালিত হয়?
১৪ই আগস্ট দিনটি কন্যাশ্রী দিবস রূপে পালিত হয়।
কন্যাশ্রী প্রকল্পে কি মেয়ের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা আবশ্যিক?
হ্যাঁ, কন্যাশ্রী প্রকল্পে আবেদনের জন্য মেয়ের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক।
কন্যাশ্রী প্রকল্প কারা পাবে?
কন্যাশ্রী স্কলারশিপের অধীনে পশ্চিমবঙ্গের যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকার কম সে সকল পরিবারের ১৩ বছর বয়সি স্কুলের ছাত্রীদের থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্রীরা বার্ষিক ₹১,০০০/- টাকা থেকে শুরু করে ₹২,৫০০/- টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে। এছাড়া ১৮ বছর বয়সের পর অবিবাহিত ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের ক্ষেত্রে এককালীন ₹২৫,০০০/- টাকার স্কলারশিপ প্রদান করা হয়ে থাকে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পে কিভাবে টাকা দেওয়া হয়?
কন্যাশ্রী বৃত্তির টাকা DBT মাধ্যমে সরাসরি সুবিধাভোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে, যা সুবিধাভোগী উল্লিখিত মোবাইল নম্বরে এসএমএস-এর মাধ্যমে জানতে পারবেন।