অটল পেনশন যোজনাটি ২০১৫ সালে ‘পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অথরিটি অফ ইন্ডিয়া’ (PFRDA) এর অধীনে চালু করা হয়েছিল। এই যোজনাটি প্রধানত দেশের অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মী যেমন বেসরকারী খাতে কর্মরত মানুষ, চুক্তিবদ্ধ বা ক্ষুদ্র শিল্পের শ্রমিক বা কৃষি কাজে যুক্ত শ্রমিকদের সুবিধার্থে করা হয়েছে যাদের কোন পেনশনের ব্যবস্থা নেই, তারা যাতে ৬০ বছর বয়সের পর ন্যূনতম ₹১০০০/- থেকে ₹৫০০০/- পর্যন্ত পেনশন পেতে পারেন সেই উদ্দেশ্যেই গঠন করা হয়।
অটল পেনশন যোজনা বিবরণ
এইবার এই যোজনার ডিটেলসটি একবার দেখে নেওয়া যাক সেটি হলঃ
- এই যোজনায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা হোল ১৮ থেকে ৪০ বছর পর্যন্ত।
- আমানতকারীকে সর্বনিম্ন ২০ বছর বিনিয়োগ করতে হবে।
- এক্ষেত্রে মাসিক প্রিমিয়ামের পরিমাণ হল ₹২১০/- থেকে ₹১৪৫৪/- পর্যন্ত।
- ন্যূনতম পেনশনের ক্ষেত্রে মাসিক প্রিমিয়ামের পরিমাণ ₹৪২/- থেকে ₹২৯১/- পর্যন্ত।
- আমানতকারী ৬০ বছর বয়সের পর প্রতি মাসে ন্যূনতম ₹১,০০০/- টাকা থেকে সর্বোচ্চ ₹৫,০০০/- টাকা পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট পেনশন পাবেন।
অটল পেনশন যোজনা সম্বন্ধীয় সাম্প্রতিক সমীক্ষা
অটল পেনশন যোজনা সম্মন্ধে সম্প্রতি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ (ICSSR) এর এক সমীক্ষায় জানা গেছে যে, আমানতকারীদের এক-তৃতীয়াংশ এই যোজনা থেকে বেরিয়ে গেছেন এবং সেক্ষেত্রে তাদের অভিযোগ যে, তাদের কোন স্পষ্ট অনুমতি ছাড়াই এই পেনশন যোজনার অ্যাকাউন্ট তাদের খুলে দেওয়া হয়েছিল।
অটল পেনশন যোজনা বিতর্ক
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এই অটল পেনশন যোজনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার ‘এক্স’ হ্যান্ডলে লেখেন যে ‘অর্থমন্ত্রী 24 শে মার্চ বেঙ্গালুরুতে ছিলেন, যেখানে তিনি মোদী সরকারের ‘ফ্ল্যাগশিপ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি’ রূপে অটল পেনশন যোজনার সুবিধাগুলি ঘোষণা করেছিলেন। তার ঠিক এক দিন পরে জানা গেছে যে-’
- এই যোজনার এক তৃতীয়াংশ গ্রাহককে ‘স্পষ্ট অনুমতি’ ছাড়াই এই স্কিমে নথিভুক্ত করা হয়েছিল, অর্থাৎ অফিসাররা তাদের কোটা পূরণ করতে চেয়েছিলেন।
- এই যোজনার আমানতকারীদের প্রায় ৮৩% হলেন সর্বনিম্ন ₹১,০০০/- মাসিক পেনশনের অন্তর্গত, যেটি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম, তবে সেক্ষেত্রে মাসিক প্রিমিয়ামের পরিমাণও কম হওয়ার কারনে তা সুবিধাভোগীদের দ্বারা ‘অলক্ষিত’ থেকে যায়।
- এছাড়া গ্রাহকদের ক্ষেত্রে এই যোজনায় রিটার্নের পরিমাণ খুব আকর্ষণীয় নয় কারণ এটি একটি নির্দিষ্ট আয়ের পেনশন এবং তা ক্রমবর্ধমান বাজার মূল্যের সাথেও সামঞ্জস্যহীন।
একটি মিডিয়া রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন যে অটল পেনশন যোজনা থেকে বাদ দেওয়া তিনজনের মধ্যে প্রতি এক জনের অ্যাকাউন্ট তাদের স্পষ্ট অনুমতি ছাড়াই খোলা হয়েছিল এবং বলেন যে ‘ফ্ল্যাগশিপ অটল পেনশন যোজনা হল খুব খারাপভাবে ডিজাইন করা একটি স্কিম। এটি হল একটি কাগজের বাঘ যার জন্য আধিকারিকদের প্রতারণা করতে হয় এবং সাধারন মানুষদের এতে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হয়’।
তিনি আরও বলেন যে ‘এটি মোদি সরকারের নীতিনির্ধারণের একটি উপযুক্ত উপস্থাপনাই হল শিরোনাম ব্যবস্থাপনা, বাস্তবে কিছু মাত্র সুবিধাই আসলে জনগণের কাছে পৌঁছায়!’।
এই নিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এবং কংগ্রেস নেতার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিরোধ শুরু হতে দেখা যায়। যেখানে কংগ্রেস নেতারা পেনশন স্কিমের ত্রুটিগুলি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেখানে অর্থমন্ত্রী স্কিমের সুবিধাগুলি বিশ্লেষণ করছেন।
কংগ্রেস নেতার এই অভিযোগের জবাবে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন যে এই প্রকল্পটি সর্বোত্তম আর্কিটেকচারের উপর ভিত্তি করে গঠন করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি হল দরিদ্র এবং নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য করা একটি ভর্তুকিযুক্ত প্রকল্প৷ এই প্রকল্পের অধীনে আমানতকারীরা তাদের পছন্দের প্রিমিয়াম বেছে নিতে পারেন এবং এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চালনা করতে পারেন। এছাড়া তারা এটি চালিয়ে যাওয়ার বা ইচ্ছা মতো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি এও বলেন যে এই পেনশন প্রকল্পটি কমপক্ষে ৮ শতাংশ নিশ্চিত রিটার্ন দেয়।
তিনি ২০১৭তে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী রিচার্ড থ্যালার এবং ক্যাস সানস্টেইন যিনি একজন অধ্যাপক এবং ওবামা প্রশাসনে কাজ করেছেন তাদের বই ‘নাজ’-এর কথা উল্লেখ করে বলেন যে পাবলিক স্কিম ডিজাইন করার ক্ষেত্রে সঠিক ‘চয়েস আর্কিটেকচার’-এর প্রয়োজনীয়তা সেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের ‘নির্দিষ্ট আয়ের পেনশন’ কথাটির প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন যে তারা সত্যতা যাচাই না করেই এ কথাটি বলেছেন। ভারত সরকার অটল পেনশন যোজনার অধীনে বিদ্যমান সুদের হার এবং রিটার্ন নির্বিশেষে, ন্যূনতম ৮% রিটার্ন নিশ্চিত করে যা হল একটি আকর্ষণীয় গ্যারান্টিযুক্ত ন্যূনতম রিটার্ন। এক্ষেত্রে প্রকৃত রিটার্নের ঘাটতি পূরণ করতে ভারত সরকার PFRDA-কে ভর্তুকি প্রদান করে থাকে।
তিনি এও বলেন যে যদি এই যোজনার গ্রাহকদের অবদানের উপর উচ্চ বিনিয়োগ রিটার্ন পাওয়া যায়, তাহলে গ্রাহকদের উচ্চতর পেনশন দেওয়া হবে এবং প্রকৃতপক্ষে, বর্তমানে রিটার্ন ৮%-এর বেশি দেওয়া হয়ে থাকে।