Updated on September 8th, 2024 ||
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ হল সবচেয়ে জনপ্রিয়, ঝুঁকিবিহীন, দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগগুলির মধ্যে একটি। ভারত সরকার দেশের নাগরিকদের সঞ্চয়ের প্রতি উৎসাহিত করতে এবং একটি নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ প্রদানের জন্য এই প্রকল্পটি চালু করেছে। এই প্রকল্পের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারন হোল যে পিপিএফ অ্যাকাউন্টের অর্থ সুরক্ষিত, কর মুক্ত এবং এর থেকে নিশ্চিত রিটার্ন পাওয়া যায়।
পিপিএফ একাউন্ট কি
সাধারন নাগরিকের ছোট ছোট বিনিয়োগগুলিকে একত্রিত করে একটি দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে, ১৯৬৮ সালে ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় দ্বারা ন্যাশনাল সেভিংস ইনস্টিটিউটের অধীনে ‘পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড’ (পিপিএফ) প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগ হওয়ায় বিনিয়োগের অর্থ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত এবং এটি বাজার-সংযুক্ত না হওয়ায় এর রিটার্নও নিশ্চিত।
পিপিএফ অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগকৃত অর্থের অর্জিত সুদ চক্র বৃদ্ধি হারে জমা হতে থাকে এবং মূল পরিমাণ বা প্রিন্সিপাল এমাউন্ট, অর্জিত সুদ এবং জমাকৃত পরিমাণ বা ম্যাচুরিটি এমাউন্টের সম্পূর্ণটাই কর ছাড়ের সুবিধা রয়েছে।
এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফ
পিপিএফ একাউন্ট বিবরণ
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি নিচে তালিকাভুক্ত করা হলঃ
স্কিমের নাম | পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ |
স্কিমের ধরণ | কেন্দ্রীয় সরকারের স্কিম |
দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রণালয় | কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয় |
পরিচালিত প্রতিষ্ঠান | ন্যাশনাল সেভিংস ইনস্টিটিউট |
মেয়াদ | ১৫ বছর |
সুদের হার | বার্ষিক ৭.১% |
ন্যূনতম বিনিয়োগের পরিমাণ | বার্ষিক ₹৫০০/- |
সর্বোচ্চ বিনিয়োগের পরিমাণ | বার্ষিক ₹১.৫ লক্ষ |
জমার ধরণ | নগদ, চেক, ডিমান্ড ড্রাফ্ট (ডিডি), বা অনলাইন ফান্ড ট্রান্সফার |
ঝুঁকির পরিমাণ | ঝুঁকি মুক্ত নিশ্চিত রিটার্ন |
ঋণের অধিকারী | ৩য় বছর থেকে ৬ষ্ট বছর পর্যন্ত |
আংশিক প্রত্যাহার | সপ্তম বছর থেকে করা সম্ভব |
কর ছাড় | ধারা 80C অধীনে ₹১.৫ লক্ষ পর্যন্ত |
পিপিএফ একাউন্ট সুবিধা
বিনিয়োগের সীমাঃ
পিপিএফ অ্যাকাউন্টে একক ভাবে বা বার্ষিক সর্বোচ্চ ১২টি কিস্তির মাধ্যমে বিনিয়োগ করা যায়। প্রতি আর্থিক বছরে সর্বনিম্ন ₹৫০০ এবং সর্বোচ্চ ₹১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যেতে পারে৷ অ্যাকাউন্টটি সক্রিয় রাখার জন্য প্রতি বছর পিপিএফ অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করতে হবে।
বিনিয়োগের মেয়াদঃ
পিপিএফ অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১৫ বছরের লক-ইন পিরিয়ড থাকে, যার আগে তহবিল সম্পূর্ণরূপে উত্তোলন করা যায় না। বিনিয়োগকারী প্রয়োজনে লক-ইন পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরে সেই মেয়াদ ৫ বছর করে বাড়াতে পারেন।
পিপিএফ সুদের হারঃ
এক্ষেত্রে সুদের হার প্রতি ত্রৈমাসিকের জন্য সরকার দ্বারা নির্ধারণ করা হয়। অর্থবর্ষ ২০২৩-২৪ এর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক অর্থাৎ ১লা জুলাই থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুদের হার ৭.১% নির্ধারণ করা হয়েছে৷
প্রতি মাসের ৫ তারিখ থেকে মাসের শেষ দিন পর্যন্ত অ্যাকাউন্টের সর্বনিম্ন PPF ব্যালেন্সের সুদের পরিমাণ গণনা করা হয় এবং প্রতি আর্থিক বছরের শেষে PPF অ্যাকাউন্টে অর্থ জমা করা হয়। তাই, PPF বিনিয়োগকারীদের প্রতি মাসের ৫ তারিখের আগে তাদের PPF অ্যাকাউন্টে অবদান রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কর ছাড়ের সুবিধাঃ
পিপিএফ -এর কর নীতি এক্সেম্পট বা অব্যাহতি (EEE) বিভাগের অধীনে পড়ে অর্থাৎ PPF অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ করা অর্থ আয়কর ধারা 80C অনুযায়ী ব্যক্তির করযোগ্য আয় থেকে অব্যাহতি বা ছাড় দেওয়া হয়। এছাড়াও, জমাকৃত পরিমাণের সাথে পিপিএফ আমানতের উপর অর্জিত সুদের ওপরেও সম্পূর্ণ কর ছাড়ের সুবিধা রয়েছে।
পিপিএফের বিনিময়ে ঋণঃ
একজন পিপিএফ অ্যাকাউন্টধারী তার পিপিএফ ব্যালেন্সের বিনিময়ে ঋণ নিতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে নিয়ম হোল যে অ্যাকাউন্টধারী তৃতীয় আর্থিক বছর থেকে একটি ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন, এবং এই সুবিধাটি শুধুমাত্র ষষ্ঠ আর্থিক বছরের শেষ পর্যন্ত উপলব্ধ থাকবে।
তবে কখনও সম্পূর্ণ পরিমাণের ওপর ঋণ নেওয়া সম্ভব নয়। যে বছর ঋণের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে তার ঠিক আগের দুই বছরের শেষে উপলব্ধ পরিমানের সর্বাধিক ২৫% ঋণ নেওয়া যেতে পারে।
পিপিএফের ঝুঁকিঃ
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ হোল ভারত সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং এটি বাজার সংযুক্ত ঝুঁকির সাথে যুক্ত নয়। এই ফান্ডে বিনিয়োগের সুরক্ষা সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিত এবং এটি ঝুঁকিমুক্ত রিটার্ন প্রদান করে। এই সমস্ত কারনের জন্য পিপিএফ অ্যাকাউন্ট গ্রাহকদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের একটি বিনিয়োগ।
পিপিএফ নমিনেশনঃ
পিপিএফ অ্যাকাউন্টধারক অ্যাকাউন্ট খোলার সময় বা পরবর্তী কোন সময়ে এক বা একাধিক ব্যাক্তিকে মনোনীত করতে পারেন। একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে পিপিএফ অ্যাকাউন্টধারককে প্রত্যেকের শেয়ারের শতাংশ উল্লেখ করতে হবে। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের নামে খোলা অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে মনোনয়ন অনুমোদিত নয়।
পিপিএফ ক্যালকুলেটর
এখানে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের বর্তমান ৭.১০% সুদের হারে বার্ষিক ₹১,২০,০০০ টাকা জমা করার একটি সম্পূর্ণ চার্ট দেওয়া হোলঃ
আর্থিক বছর | বিনিয়োগকৃত পরিমাণ | সুদের পরিমাণ | পরিপক্কতার পরিমাণ |
অ্যাকাউন্ট খোলা | ₹১,২০,০০০ | ₹৮,৫২০ | ₹১,২৮,৫২০ |
১ | ₹২,৪০,০০০ | ₹২৬,১৬৫ | ₹২,৬৬,১৬৫ |
২ | ₹৩,৬০,০০০ | ₹৫৩,৫৮৩ | ₹৪,১৩,৫৮৩ |
৩ | ₹৪,৮০,০০০ | ₹৯১,৪৬৭ | ₹৫,৭১,৪৬৭ |
৪ | ₹৬,০০,০০০ | ₹১,৪০,৫৬১ | ₹৭,৪০,৫৬১ |
৫ | ₹৭,২০,০০০ | ₹২,০১,৬৬১ | ₹৯,২১,৬৬১ |
৬ | ₹৮,৪০,০০০ | ₹২,৭৫,৬১৯ | ₹১১,১৫,৬১৯ |
৭ | ₹৯,৬০,০০০ | ₹৩,৬৩,৩৪৮ | ₹১৩,২৩,৩৪৮ |
৮ | ₹১০,৮০,০০০ | ₹৪,৬৫,৮২৬ | ₹১৫,৪৫,৮২৬ |
৯ | ₹১২,০০,০০০ | ₹৫,৮৪,০৯৯ | ₹১৭,৮৪,০৯৯ |
১০ | ₹১৩২০০০০ | ₹৭,১৯,২৯০ | ₹২০,৩৯,২৯০ |
১১ | ₹১৪৪০০০০ | ₹৮,৭২,৬০০ | ₹২৩,১২,৬০০ |
১২ | ₹১৫৬০০০০ | ₹১০,৪৫,৩১৪ | ₹২৬,০৫,৩১৪ |
১৩ | ₹১৬৮০০০০ | ₹১২,৩৮,৮১২ | ₹২৯,১৮,৮১২ |
১৪ | ₹১৮০০০০০ | ₹১৪,৫৪,৫৬৭ | ₹৩২,৫৪,৫৬৭ |
পিপিএফ একাউন্ট যোগ্যতা
PPF অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত যোগ্যতাগুলি আবশ্যিকঃ
- ১৮ বছরের বেশি বয়সী ভারতীয় বাসিন্দারা নিজের জন্য বা কোন নাবালকের নামে একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
- পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য কোন ঊর্ধ্ব বয়স সীমা নেই।
- একজন নাগরিকের শুধুমাত্র একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে যদি না দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টটি কোন নাবালকের নামে হয়।
- ১৮ বছরের কম বয়সী কোন নাবালক বাচ্চার জন্যও এই অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, নাবালক এবং অভিভাবক/নাবালকের অ্যাকাউন্টে মোট পিপিএফ বিনিয়োগ একটি আর্থিক বছরে ₹১.৫ লাখের বেশি হতে পারবে না। এছাড়াও, দাদা-দাদি তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না তবে যদি নাবালকের পিতা-মাতার মৃত্যু হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তাঁরা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন।
- এনআরআই বা অনাবাসী ভারতীয় এবং এইচইউএফ বা হিন্দু অবিভক্ত পরিবার পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার যোগ্য নয়। যদি তাদের নামে একটি বিদ্যমান পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে তা ম্যাচুরিটি হওয়ার তারিখ পর্যন্ত সক্রিয় থাকবে। তবে সেক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টগুলি ৫ বছরের জন্য বাড়ানো যাবে না।
- এক্ষেত্রে যৌথ অ্যাকাউন্ট এবং একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি নেই।
পিপিএফ একাউন্টের জন্য প্রয়োজনীয় নথি
একটি পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা PPF অ্যাকাউন্ট খুলতে নিম্নলিখিত নথিগুলির প্রয়োজনঃ
- পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার ফর্ম (এই ফর্মটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য অনুমোদিত যে কোনও ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া যায়)
- ব্যক্তির পরিচয় যাচাই করার জন্য KYC নথি – আধার কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, বা ড্রাইভিং লাইসেন্স
- ঠিকানা প্রমাণ
- প্যান কার্ড
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- নমিনি ফর্ম
পিপিএফ অ্যাকাউন্টের জন্য আধার এবং প্যান এখন বাধ্যতামূলক
অর্থ মন্ত্রকের জারি করা সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, একটি নতুন পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে আপনার আধার নম্বর এবং প্যান প্রদান করা বাধ্যতামূলক। যদি আপনার আধার না থেকে থাকে, তাহলে আপনাকে অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আধারের জন্য তালিকাভুক্তির আবেদনের প্রমাণ বা নথিভুক্তকরণ আইডি প্রদান করতে হবে এবং অ্যাকাউন্ট খোলার তারিখ থেকে ৬ মাসের মধ্যে আধার নম্বর প্রদান করতে হবে।
আপনার যদি ইতিমধ্যেই একটি বিদ্যমান PPF অ্যাকাউন্ট থাকে এবং আপনি আপনার আধার নম্বর জমা না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনাকে ১লা এপ্রিল ২০২৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে তা করতে হবে। তাছাড়া, আপনি যদি অ্যাকাউন্ট খোলার সময় আপনার PAN জমা না দিয়ে থাকেন , আপনাকে নিম্নলিখিত ইভেন্টগুলির মধ্যে যে কোনওটি ঘটার তারিখ থেকে ২ মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে যেমনঃ
- পিপিএফ অ্যাকাউন্টে যে সময়ে ব্যালেন্স ₹৫০,০০০ ছাড়িয়ে যাবে।
- কোন আর্থিক বছরে অ্যাকাউন্টের সমস্ত ক্রেডিটের সমষ্টি ₹১ লাখের বেশি হলে।
- অ্যাকাউন্ট থেকে এক মাসে সমস্ত উত্তোলন এবং স্থানান্তরের সমষ্টি ₹১০,০০০ টাকার বেশি হলে৷
৬ মাসের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আধার এবং ২ মাসের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্যান জমা দিতে ব্যর্থ হলে, অ্যাকাউন্ট অফিসে আধার নম্বর এবং প্যান জমা না হওয়া পর্যন্ত অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকবে।
একটি PPF অ্যাকাউন্ট কিভাবে খুলবেন?
পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুব সহজেই পোস্ট অফিসে বা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বা পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মতো যে কোনও জাতীয় ব্যাঙ্কে খোলা যেতে পারে। বর্তমানে আইসিআইসিআই, এইচডিএফসি, অ্যাক্সিস, কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের মতো কিছু ব্যক্তিগত ব্যাঙ্কও এই সুবিধা প্রদানের জন্য অনুমোদিত।
একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট অফলাইনে খোলার পাশাপাশি অনলাইনেও করা যেতে পারে। উদাহরন স্বরূপ স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অনলাইনে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াটি নিচে দেখান হোল।
- SBI পোর্টালে গিয়ে ‘কন্টিনিউ টু লগইন’ এ ক্লিক করে আপনার ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হবে।
- ওপরের মেনুবার থেকে ‘ডিপোজিট এন্ড ইনভেস্টমেন্টস’-এ ক্লিক করে ড্রপডাউন থেকে ‘পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF)’ ক্লিক করতে হবে।
- ‘PPF অ্যাকাউন্ট খোলা (উইদাউট ভিসিটিং ব্রাঞ্চ)’ বিকল্পে ক্লিক করুন।
- সাধারণ নির্দেশনা পড়ুন, শর্তাবলী স্বীকার করুন এবং ‘প্রোসিড’ বোতামে ক্লিক করুন।
- অ্যাকাউন্টটি নির্বাচন করুন এবং ‘প্রোসিড’ বোতামে ক্লিক করুন।
- আপনার অ্যাকাউন্টের বিশদ আগে থেকেই পূরণ করা থাকবে। আপনি নিচে জমার পরিমাণ, নমিনি বিবরণ লিখুন, এরপর নিচে ২টি চেক বক্সে ক্লিক করে ‘সাবমিট’-এ ক্লিক করুন।
- এরপর অনলাইন মোডের মাধ্যমে প্রাথমিক জমার পরিমাণ দিন।
- অতঃপর আপনার পিপিএফ অ্যাকাউন্টটি তৈরি হবে এবং পিপিএফ অ্যাকাউন্ট নম্বর প্রদর্শিত হবে। PPF অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিং-এ পাওয়া যাবে।
- অ্যাকাউন্ট খোলার ৩০ দিনের মধ্যে PPF রসিদ, KYC নথি এবং আপনার ছবি নিয়ে SBI শাখায় জমা করতে হবে।
পোস্ট অফিসে পিপিএফ একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া
নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরন করে আপনি পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্কের শাখায় পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
- আপনার নিকটস্থ পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্ক থেকে একটি আবেদনপত্র সংগ্রহ করুন।
- ফর্মটি পূরণ করুন এবং প্রয়োজনীয় KYC নথি এবং একটি পাসপোর্ট-আকারের ছবি সহ জমা দিন।
- এরপর প্রাথমিক জমার পরিমাণ নগদে, ডিমান্ড ড্রাফ্ট (DD) বা চেকে জমা করুন।
- আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে, পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে একটি পাসবুক দেওয়া হবে।
পিপিএফ থেকে টাকা তোলা
পিপিএফ এর মেয়াদকাল হোল ১৫ বছরের এবং এই ধরনের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনাগুলিতে মেয়াদকাল পূরণের আগে টাকা তোলার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়ে থাকে।
কোন ব্যক্তির একাধিক কারন থাকতে পারে যখন তিনি পিপিএফ অ্যাকাউন্টের অর্থ তুলতে চান। সেরকম জরুরি অবস্থার ক্ষেত্রে, পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে আংশিক প্রত্যাহার করা যেতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে যে, অ্যাকাউন্ট খোলার ৬ বছর পূর্ণ হওয়ার পরেই শুধুমাত্র আংশিক প্রত্যাহার করা যাবে। মোট ব্যালেন্সের ৫০% পর্যন্ত অর্থ আপনি ৭ম আর্থিক বছর থেকে উত্তোলন করতে পারবেন।
একটি আর্থিক বছরে শুধুমাত্র একবারই আপনি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে পারবেন।
পিপিএফ থেকে টাকা তোলার নিয়ম
PPF অ্যাকাউন্ট থেকে আংশিক বা সম্পূর্ণ টাকা তোলার ক্ষেত্রে আপনাকে পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্কের যে শাখায় পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে সেখানে ফর্ম C জমা দিতে হবে।
পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্কে আপনি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে কীভাবে টাকা তুলবেন তার একটি নির্দেশিকা দেওয়া হোলঃ
- যেখানে আপনি PPF অ্যাকাউন্ট খুলেছেন সেই ব্যাঙ্ক/পোস্ট অফিস থেকে একটি ফর্ম সি নিন।
- ফর্মে আপনার PPF অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং অ্যাকাউন্ট থেকে আপনি যে পরিমাণ টাকা তুলতে চান তা লিখতে হবে। তা ছাড়া, কত বছর ধরে অ্যাকাউন্ট সক্রিয় ছিল তাও আপনাকে উল্লেখ করতে হবে। আপনি যদি কোনও নাবালকের পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে তুলতে চান তবে সেক্ষেত্রে ফর্মে তার নাম উল্লেখ করতে হবে।
(SBI ব্যাঙ্কের ফর্ম সি)
- ফর্মের নিচের অংশে আপনাকে উল্লেখ করতে হবে যে টাকা সরাসরি সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা করা হবে অথবা ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে চেক বা ডিমান্ড ড্রাফ্ট ইস্যু করা হবে।
পিপিএফ একাউন্ট নমিনেশন
PPF অ্যাকাউন্টে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন করা যেতে পারে। যদি, একাধিক ব্যক্তিদের মনোনীত করা হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিটি মনোনীত ব্যক্তির শতাংশের ভাগ উল্লেখ করতে হবে। তবে মনোনয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে-
- পিপিএফ এর মেয়াদকালের যে কোন সময় মনোনয়ন করা যাবে। পরবর্তীকালে মনোনয়ন পরিবর্তন বা বাতিলের প্রয়োজন হলে তা আবেদনের মাধ্যমে করতে হবে।
- নমিনেশনের জন্য অ্যাকাউন্টধারীকে ফর্ম E জমা দিতে হবে।
(SBI ব্যাঙ্কের ফর্ম ই)
- মনোনয়ন ফরমে অ্যাকাউন্টধারী এবং দুইজন সাক্ষীর স্বাক্ষর থাকতে হবে। মনোনীতদের স্বাক্ষরের প্রয়োজন নেই।
- কোন নাবালকের পিপিএফ অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে মনোনয়ন করা যাবে না।
পিপিএফ একাউন্ট অংশগ্রহণকারী ব্যাঙ্কের তালিকা
আপনি আপনার নিকটস্থ পোস্ট অফিস শাখায় অথবা ব্যাঙ্ক শাখায় PPF অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। পিপিএফ অংশগ্রহণকারী ব্যাঙ্কগুলির তালিকা নীচে দেওয়া হলঃ
- অন্ধ্র ব্যাঙ্ক
- এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক
- ব্যাঙ্ক অফ বরোদা
- ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
- ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র
- কানারা ব্যাঙ্ক
- সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
- আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক লিমিটেড
- আইডিবিআই ব্যাংক লিমিটেড
- কর্পোরেশন ব্যাংক
- দেনা ব্যাংক
- ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক
- ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক
- ওরিয়েন্টাল ব্যাংক অফ কমার্স
- পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক
- স্টেট ব্যাঙ্ক অফ বিকানের এবং জয়পুর
- স্টেট ব্যাঙ্ক অফ হায়দ্রাবাদ
- স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
- স্টেট ব্যাঙ্ক অফ মহীশূর
- স্টেট ব্যাঙ্ক অফ পাতিয়ালা
- স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ট্রাভাঙ্কোর
- সিন্ডিকেট ব্যাংক
- ইউকো ব্যাংক
- ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
- ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
- বিজয়া ব্যাঙ্ক
পিপিএফ একাউন্ট কীভাবে অন্য শাখা বা ব্যাঙ্কে স্থানান্তর করবেন?
এমন অনেক সময়ই হয় যে কাজের সূত্রে বা অন্য কোন কারনে আপনাকে শহর পরিবর্তন করতে হয়, সেক্ষেত্রে আপনার PPF অ্যাকাউন্টটিও অন্য ব্যাঙ্কের শাখা বা পোস্ট অফিসগুলিতে স্থানান্তরিত করা যেতে পারে। আপনি একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট সারা দেশেই স্থানান্তর করতে পারেন।
PPF অ্যাকাউন্ট স্থানান্তরের পদ্ধতিগুলি নিচে বিস্তারিত দেওয়া হলঃ
- আপনার যে ব্যাঙ্কের শাখা বা পোস্ট অফিসে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট আছে সেখানে যান এবং সাথে অবশ্যই পিপিএফ পাসবুক নিতে ভুলবেন না।
- সেখানে একটি স্থানান্তরের আবেদন পত্র পূরণ করে জমা করতে হবে। স্থানান্তরের আবেদনপত্রে নতুন ব্যাঙ্কের শাখা বা পোস্ট অফিসের সম্পূর্ণ ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
- আবেদন পত্রটি জমা দেওয়ার পর বর্তমান শাখা প্রতিনিধি আপনার আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করবেন এবং অ্যাকাউন্টের সার্টিফাইড কপি সহ যাবতীয় নথি নতুন ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস শাখায় ফরোয়ার্ড করবেন।
- নতুন ব্যাঙ্ক বা পোস্ট-অফিস শাখা আপনার নথি গ্রহণ করলে, আপনাকে জানানো হবে। সেক্ষেত্রে কোন পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে নতুন শাখায় একটি নতুন পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন পত্র জমা দিতে হবে এবং আপনার কেওয়াইসি প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে প্যান কার্ডের কপি, ব্যক্তিগত পরিচয় প্রমাণ এবং ঠিকানার প্রমাণ জমা দিতে হবে।
একটি নিষ্ক্রিয় PPF একাউন্টকে কিভাবে সক্রিয় করবেন?
পিপিএফ অ্যাকাউন্টে প্রতি বছর ন্যূনতম ৫০০ টাকা অবদান জমা না করলে অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে। নিম্নলিখিত উপায় আপনি একটি নিষ্ক্রিয় PPF অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
- অ্যাকাউন্টটি পুনরায় সক্রিয় করার জন্য যেখানে অ্যাকাউন্টটি রয়েছে সেই পোস্ট অফিসে বা ব্যাংক শাখায় একটি লিখিত অনুরোধ জমা দিতে হবে।
- আপনার অবদান না রাখা প্রতিটি বছরের জন্য ন্যূনতম ৫০০ টাকা এবং নিষ্ক্রিয় বছর প্রতি ৫০ টাকা করে জরিমানা প্রদান করতে হবে।
- অতঃপর পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্ক আপনার অনুরোধটি প্রসেস্ করবে এবং অ্যাকাউন্টটি পুনরায় সক্রিয় করা হবে।
পিপিএফ একাউন্টের সম্প্রসারণ
একটি পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিপিএফ অ্যাকাউন্টের মেয়াদকাল ১৫ বছরের হয়ে থাকে, যার পরে আপনি অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করতে পারেন অথবা পুনরায় কোন অবদান জমা করে বা না করে এটির মেয়াদকাল পাঁচ বছর করে বাড়িয়ে নিতে পারেন। এই সম্প্রসারণের সংখ্যা সীমাহীন। অতএব, আপনি আপনার PPF অ্যাকাউন্টের মেয়াদকাল ২০ বছর, ২৫ বছর, ৩০ বছর, এবং আরও বেশি করতে পারেন।
পিপিএফ অ্যাকাউন্ট অকালবন্ধ
অ্যাকাউন্ট খোলার ৫ বছরের মধ্যে পিপিএফ অ্যাকাউন্ট অকাল বন্ধ করা যায় না। তারপরে শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট কারণ যেমন অ্যাকাউন্টধারী, বা তার পত্নী বা নির্ভরশীল পিতামাতার গুরুতর অসুস্থতা অথবা সন্তানের উচ্চ শিক্ষা বা বাসস্থানের পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও অ্যাকাউন্টটি অকালবন্ধ করা যেতে পারে।
পিপিএফ এবং এফডি তুলনা
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF) এবং ফিক্সড ডিপোজিট (FDs) হোল সমান জনপ্রিয় এবং দুটিই ঝুঁকি বিহীন নিশ্চিত রিটার্ন প্রদান করে। তবে, উভয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে যেমনঃ
বিনিয়োগের সীমাঃ FD এর ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সর্বোচ্চ কোন সীমা নেই। তবে, ব্যাঙ্ক বিশেষে তা পরিবর্তিত হতে পারে অর্থাৎ ব্যাঙ্ক নিজস্ব কোন সীমা নির্ধারণ করতে পারে যেমন SBI এর সর্বাধিক FD তে বিনিয়োগের সীমা হোল ২ কোটি টাকা। যে সমস্ত আমানতকারীরা ১ কোটি টাকার ওপরে ফিক্সড ডিপোজিট করেন তাদের ব্যাঙ্ক থেকে বিশেষ সুদের হার দেওয়া হয়।
মেয়াদঃ এই দুই ক্ষেত্রের মেয়াদকালে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে, তা হোল যে FD তে বিনিয়োগকারীরা মেয়াদের সময়কাল নির্বাচন করার সুযোগ পান। সেক্ষেত্রে ৭ দিন থেকে ১০ বছর পর্যন্ত মেয়াদকাল আপনি নির্ধারণ করতে পারবেন। অন্যদিকে, PPF এর ক্ষেত্রে ১৫ বছরের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ রয়েছে, যা একটি স্থিতিশীল এবং দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় প্রদান করে।
সুদের হারঃ FD সুদের হার ব্যাঙ্ক দ্বারা নির্ধারিত হয় তাই সেক্ষেত্রে এক ব্যাঙ্ক থেকে অন্য ব্যাঙ্কে তা পরিবর্তিত হতে পারে। তবে, প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এফডি-তে উচ্চ সুদের হার সহ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। পিপিএফের ক্ষেত্রে সেরকম কোন ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে প্রতি ৩মাস অন্তর সরকার দ্বারা সুদের হার নির্ধারিত হয়।
ঋণঃ ঋণের সুবিধাতেও দুটি ক্ষেত্রে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। পিপিএফ অ্যাকাউন্টের ঋণের ক্ষেত্রে আপনি অ্যাকাউন্ট খোলার ৩য় থেকে ৫ম বছরের মধ্যে মোট ব্যালেন্সের ২৫% পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন। অন্যদিকে, এফডি-ও ঋণ প্রদান করে, এবং সেক্ষেত্রে আপনি মোট জমার পরিমাণের ৯০% পর্যন্ত ঋণের সুবিধা পাবেন। FD ঋণের সুদের হার সাধারণ FD সুদের হার থেকে ১-২ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে।
কর ছাড়ঃ পিপিএফের ক্ষেত্রে বার্ষিক জমার পরিমাণ, সুদের পরিমাণ এবং ম্যাচুরিটি হওয়া রাশি সম্পূর্ণটাই আয়কর ধারা 80C অনুযায়ী ছাড় পাওয়া যায়। কিন্তু এফডি-র ক্ষেত্রে বার্ষিক জমার সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা কর ছাড় পাওয়া যায় তাছাড়া এফডি থেকে প্রাপ্ত সুদের আয়ের ওপর কোন কর ছাড় পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে সেটি আমানতকারীর ট্যাক্স স্ল্যাব অনুযায়ী করযোগ্য হবে।
আংশিক প্রত্যাহারঃ PPF অ্যাকাউন্ট খোলার পরে ৭ম আর্থিক বছর থেকে আংশিক উত্তোলন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনি ৫০% পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারেন এবং আংশিক/অকাল প্রত্যাহারের উপর কোন ট্যাক্স নেই।
অন্যদিকে সময়ের আগে FD তোলার ক্ষেত্রে, বিনিয়োগকারীকে ন্যূনতম ০.৫০% থেকে ২% জরিমানা দিতে হবে যা ব্যাঙ্ক পলিসির ওপর নির্ভর করবে।
পিপিএফ এবং মিউচুয়াল ফান্ড তুলনা
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF) হল সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একটি সঞ্চয় প্রকল্প, যা নিশ্চিত রিটার্ন প্রদান করে। অন্যদিকে মিউচুয়াল ফান্ড হল একটি বিনিয়োগের ব্যবস্থা যেটি অনেক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং স্টক, বন্ড এবং স্বল্পমেয়াদী ঋণের মতো সিকিউরিটিজে অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে।
উভয় ব্যবস্থার মধ্যে নিম্নলিখিত বিশেষত্বগুলি উল্লেখযোগ্যঃ
সুদের হারঃ পিপিএফ-এর সুদের হার সরকার দ্বারা প্রতি ত্রৈমাসিক নির্ধারিত হয়। সাধারন ভাবে এই হার প্রায় ৭-৮% ওঠানামা করেছে।
অন্যদিকে, মিউচুয়াল ফান্ডের আয় বাজার-সংযুক্ত। এটি বাজারের অবস্থার পাশাপাশি ফান্ড ম্যানেজারের কর্মক্ষমতার ওপরেও নির্ভর করে। ভারতের কয়েকটি বৃহত্তম ফান্ডের সুদের হার হোল ১০-১৫%।
নিরাপত্তাঃ পিপিএফ একটি সরকার নিয়ন্ত্রিত সঞ্চয়পত্র। এটিতে জমা করা টাকা সরকার ব্যবহার করে এবং এর সুদও সরকার দেয়। তাই কার্যত ডিফল্টের কোন সম্ভাবনা নেই।
মিউচুয়াল ফান্ডের অর্থ বাজারের ঝুঁকির সাপেক্ষ। ইক্যুইটি ফান্ডের মূল্য, ফান্ডের স্টকের দামের তারতম্যের কারণে প্রায় প্রতিদিন ওঠানামা করে। তবে, দীর্ঘমেয়াদে মিউচুয়াল ফান্ড উচ্চ রিটার্ন সম্ভাবনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে।
কর ছাড়ঃ পিপিএফ অ্যাকাউন্টে বার্ষিক সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা জমা করা যায় এবং আয়কর আইন 80C-এর অধীনে বার্ষিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড় দেওয়া হয় অর্থাৎ সম্পূর্ণটাই ছাড় পাওয়া যায়। এছাড়া পিপিএফ-এর সুদের ওপরেও কোন কর নেই।
অন্যদিকে, ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ড হল এমন ফান্ড যাদের বিনিয়োগ আয়কর আইন, ১৯৬১ এর ধারা 80C এর অধীনে কর ছাড়ের জন্য যোগ্য। এই তহবিলগুলিকে বলা হয় ইক্যুইটি লিঙ্কড সেভিংস স্কিম (ELSS)। এক্ষেত্রে বার্ষিক ছাড়ের সীমা হল ১.৫ লক্ষ টাকা৷ তবে ট্যাক্স-সেভিং মিউচুয়াল ফান্ডগুলিতে ৩ বছরের লক-ইন পিরিয়ড থাকে। অন্যান্য মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে ট্যাক্স-সেভিং প্রযোজ্য নয়।
পিপিএফ এবং এলআইসি তুলনা
পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড এবং লাইফ ইন্সুরেন্স কর্পোরেশন যদিও উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সম্পূর্ণ আলাদা। পিপিএফ হোল একটি বিনিয়োগ নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য যেখানে এলআইসি হোল একটি বীমা যা করা হয় ঝুঁকি সুরক্ষার জন্য।
স্বাভাবিক ভাবেই এই দুই ব্যবস্থার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে, সেগুলি হলঃ
উদ্দেশ্যঃ পিপিএফের প্রধান উদ্দেশ্য হোল সঞ্চয় এবং বিনিয়োগ। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারী নিজের সুবিধে মত কিছু কিছু অর্থ এতে বিনিয়োগ করেন নিজের সঞ্চয় বৃদ্ধির জন্য। অন্যদিকে এলআইসি হোল একটি বীমা এবং ঝুঁকি সুরক্ষা ব্যবস্থা যা দুর্ঘটনা বা অপ্রত্যাশিত কোন ঘটনার ক্ষেত্রে নিরাপদ ভবিষ্যতের সুরক্ষার জন্য সঞ্চয় করা হয়ে থাকে।
নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষঃ পিপিএফ হোল সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, অন্যদিকে এলআইসি হোল ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আর্থিক সেবা বিভাগের ‘বীমা নিয়ন্ত্রক ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
সুদের হারঃ PPF যেহেতু একটি সঞ্চয় ব্যবস্থা তাই তুলনামূলক বেশী সুদ পাওয়া যায়। পিপিএফের বর্তমান সুদের হার হোল ৭.১০%। LIC-র সুদের হার নীতির উপর নির্ভর করে তবে সাধারণ ভাবে ৫%-৬% মধ্যে থাকে।
মেয়াদঃ পিপিএফের মেয়াদকাল হোল ১৫ বছর এবং তা নির্দিষ্ট যা আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। তবে বিশেষ প্রয়োজনে অ্যাকাউন্ট খোলার ৬ বছর পর আপনি সর্বাধিক ৫০% পর্যন্ত জমাকৃত অর্থ তুলতে পারবেন। অন্যদিকে এলআইসি-তে মেয়াদকাল অনেক নমনীয়, এক্ষেত্রে গ্রাহক নিজের সুবিধা মত তা নির্বাচন করার সুযোগ পান।
জমার পরিমানঃ PPF এর ক্ষেত্রে বার্ষিক সর্বনিম্ন জমার পরিমাণ হল ₹৫০০ এবং সর্বাধিক হল ₹১,৫০,০০০ টাকা। LIC এর প্রিমিয়ামগুলি হোল নির্দিষ্ট যা গ্রাহক নিজের ইচ্ছে মত পরিবর্তন করতে পারেন না।
অকাল বন্ধঃ পিপিএফের ক্ষেত্রে ৫ বছরের মধ্যে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার কোন নিয়ম নেই। তবে তার পরের বছর থেকে শুধু মাত্র কিছু বিশেষ কারনে যেমন শারীরিক অসুস্থতা বা উচ্চ শিক্ষার খরচের কারনে তা অকাল বন্ধ করা যেতে পারে। তবে এলআইসি-র ক্ষেত্রে ৩ বছর পর তা বন্ধ করা যেতে পারে তবে সেক্ষেত্রে জরিমানা কাটা হবে।
কর ছাড়ঃ PPF ‘এক্সেম্পট এক্সেম্পট এক্সেম্পট’ বিভাগের অধীনে পড়ে। তাই বিনিয়োগ, সুদ এবং ম্যাচুয়র্ড অর্থ সম্পূর্ণ করমুক্ত। LIC তে ম্যাচুয়র্ড অর্থ আয়কর ধারা 10(10D) এর অধীনে সম্পূর্ণ কর-মুক্ত হবে যদি প্রিমিয়ামের পরিমাণ পরিপক্ক রাশির ১০% -এর (১লা এপ্রিল, ২০০৩-এর পরে জারি করা পলিসির ক্ষেত্রে ২০%) কম হয়৷
পিপিএফ সম্পর্কিত প্রশ্ন (FAQ)
একজনের কতগুলি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে?
কোন ব্যক্তির পোস্ট অফিস বা ব্যাঙ্কে শুধুমাত্র একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থাকতে পারে।
পিপিএফ বিনিয়োগের সর্বনিম্ন লক-ইন পিরিয়ড কত?
পিপিএফ অ্যাকাউন্টে ১৫ বছরের লক-ইন পিরিয়ড থাকে। তবে, গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার দিন থেকে ৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর পিপিএফ অ্যাকাউন্ট থেকে আংশিক উত্তোলন করতে পারেন।
পিপিএফ-এ কি প্রতি বছর একই পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে?
PPF এ গ্রাহক সুবিধা মত পরিমাণ বিনিয়োগ করতে পারেন। উপরন্তু গ্রাহক তার বিনিয়োগ এককভাবে বা প্রতি মাসের কিস্তিতে জমা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে প্রতি মাসে জমা করা পরিমাণ ৫০ এর গুণিতক হতে হবে এবং সর্বাধিক বিনিয়োগ ₹১.৫ লাখের বেশি হবে না।
পিপিএফ অ্যাকাউন্টের মেয়াদ কি বাড়ানো সম্ভব?
এই ফান্ডের ১৫ বছরের মেয়াদ শেষে ৫ বছর করে যত বার খুশী বাড়ানো যেতে পারে।
পিপিএফ-এ কখন বিনিয়োগ করা ভালো?
PPF-এ সর্বাধিক সুদ লাভের জন্য মাসের ৫ তারিখের মধ্যে অর্থ জমা করা উচিত এবং বার্ষিক জমার ক্ষেত্রে এক আর্থিক বছরে যত তাড়াতাড়ি আপনি অর্থ জমা করতে পারেন ততই ভাল। আপনি যদি আর্থিক বছরের শেষের দিকে অর্থাৎ মার্চ মাসে জমা করেন তবে শুধুমাত্র এক মাসের অর্থাৎ মার্চ-এর সুদ পাবেন।
পিপিএফ-এ মাসিক বা বার্ষিক বিনিয়োগ কোনটি করা ভালো?
পিপিএফ অ্যাকাউন্টে মাসিক অনুদান জমা করার চেয়ে আর্থিক বছরের শুরুতে এককালীন বার্ষিক বিনিয়োগ করলে উচ্চতর সুদ পাওয়া যাবে।
পিপিএফ কি বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হয়?
হ্যাঁ, PPF-এর সুদ বার্ষিক চক্রবৃদ্ধি হয়। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে অ্যাকাউন্টের সুদ মাসিক ভিত্তিতে গণনা করা হলেও তা প্রতি বছর ৩১শে মার্চ অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।
পিপিএফ অ্যাকাউন্টে সুদের হার কত?
বর্তমান PPF সুদের হার ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরের ২য় ত্রৈমাসিকের জন্য হোল ৭.১০%। এই সুদের হার ভারত সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং প্রতি ত্রৈমাসিকে তা পুনঃমূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।