প্রভিডেন্ট ফান্ড টাকা তোলার নিয়ম, হিসাব, আইন, ইপিএফও পাসবুক, পেনশন, ব্যালেন্স এবং অনলাইন দাবি সম্পর্কে জানুন!

Updated on July 12th, 2024 ||

এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফ হল একটি জনপ্রিয় সঞ্চয় প্রকল্প যা ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে ‘এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন’ বা ইপিএফও দ্বারা চালু করা হয়েছিল।

এই ‘ইপিএফও’ গঠনের প্রধান উদ্দেশ্যই হোল যে ভারতের সকল কর্মচারীদের অবসরকালের সুরক্ষা প্রদান করা। সময়নুসারে এই প্রতিষ্ঠান মোট তিনটি স্কিম চালু করে যেগুলি হোল যথাক্রমে-

সরকারী পোর্টালে প্রকাশিত হিসাব অনুযায়ী ২০২১ সালের মার্চের শেষে ইপিএফও-এর মোট কর্পাসের পরিমাণ ছিল ₹১৫,৬৯০ বিলিয়ন ($২০৯ বিলিয়নের বেশি)। যা হোল সম্পদের আকারের পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত সার্বভৌম পেনশন তহবিলের মধ্যে ৮ম তম এবং সমগ্র বিনিয়োগ তহবিলের মধ্যে ১৮ তম এবং বিশ্বের সমস্ত শীর্ষ সম্পদের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৩ তম।

Table of Contents

প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফ কি?

কর্মচারী ভবিষ্য তহবিল বা এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের জনপ্রিয় নাম হোল ‘প্রভিডেন্ট ফান্ড’ যা হোল একটি অবসরকালীন সুবিধা প্রকল্প। এটি ভারত সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের অধীনে অবস্থিত ‘ইপিএফও’ দ্বারা ১৯৫২ সালে চালু করা হয়েছিল।

এক্ষেত্রে কোন কর্মচারী যতদিন কর্মরত থাকবেন ততদিন ‘কর্মচারী ভবিষ্য তহবিল’-এ নিয়োগকর্তা এবং কর্মচারী উভয়ই প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে থাকেন। কর্মচারীরা তাদের অবসর গ্রহণের সময় এই এককালীন অর্থ গ্রহণ করেন যা সম্পূর্ণ করমুক্ত। এটি শুধু ট্যাক্স সুবিধাই দেয় না বরং অন্যান্য সেভিং স্কিমের তুলনায় ইপিএফের সুদের হারও বেশি থাকে। আর্থিক বর্ষ ২০২৩-২৪ -এ পিএফের বার্ষিক সুদের হার হোল ৮.২৫%।

employees provident fund epf bengali

প্রভিডেন্ট ফান্ড ডিটেলস

প্রভিডেন্ট ফান্ডের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি নিচে তালিকাভুক্ত করা হলঃ

স্কিমের নামএমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফ
স্কিম শুরুর বছর১৯৫২
স্কিমের ধরণকেন্দ্রীয় সরকার স্কিম
দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রণালয়কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
পরিচালিত প্রতিষ্ঠানএমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন
সুদের হারবার্ষিক ৮.২৫%
কর্মচারীর বিনিয়োগের পরিমাণবেসিক স্যালারির ১২%
নিয়োগকর্তার বিনিয়োগের পরিমাণ৩.৬৭% ইপিএফ + ৮.৩৩% ইপিএস = ১২%
আংশিক প্রত্যাহারজরুরী ভিত্তিতে ৫০%-৯০% পর্যন্ত উত্তোলন করা সম্ভব
কর ছাড়কর্মচারীর ক্ষেত্রে ₹২.৫ লক্ষ টাকা এবং নিয়োগকর্তার ক্ষেত্রে ₹৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত
সরকারী ওয়েবসাইটhttps://www.epfindia.gov.in/

প্রভিডেন্ট ফান্ড রুলস বা আইন

পিএফের নিয়মগুলি হোল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নিচে এর বিস্তৃত দেওয়া হলঃ

  • যে সমস্ত কর্মচারীদের বেসিক মাসিক বেতন ₹১৫,০০০/- টাকা বা তার বেশী সে সমস্ত কর্মচারীদের ক্ষেত্রে পিএফ বাধ্যতামূলক।
  • সাধারণভাবে কর্মচারীর অবদানের হার বেসিক স্যালারির ১২% হয়ে থাকে।
  • অনুরুপভাবে নিয়োগকর্তার অবদানের পরিমাণও হয় একই অর্থাৎ ১২%।
  • তবে নিয়োগকর্তার করা সম্পূর্ণ অবদান প্রভিডেন্ট ফান্ডে যোগ হয় না। নিয়োগকর্তার মোট অবদানের ৮.৩৩% কর্মচারীদের পেনশন প্রকল্প বা ইপিএস এবং ৩.৬৭% কর্মচারীদের ভবিষ্য তহবিল বা ইপিএফ -এ যোগ হয়।
  • কর্মচারী যদি তার কর্মসংস্থান পরিবর্তন করেন সেক্ষেত্রে নতুন প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট করার প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান পিএফ অ্যাকাউন্টটি-ই ব্যবহার করা যাবে।
  • ইপিএফও প্রতিটি সদস্যকে ১২ সংখ্যার ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর (UAN) দিয়ে থাকে। কোন কর্মচারী কর্মসংস্থান পরিবর্তন করলেও তার ‘ইউএএন’ একই থাকে। কর্মসংস্থান পরিবর্তনের ফলে যদি নতুন পিএফ অ্যাকাউন্ট করা হয় সেক্ষেত্রে ‘ইউএএন’ এর মাধ্যমে নতুন অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করা যাবে।
  • পিএফ অনুসারে অবসরের বয়স হোল ৫8 বছর এবং এরপর ৩ বছর পর্যন্ত পিএফ অ্যাকাউন্টটি চালু থাকবে তারপর তা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।
  • অ্যাকাউন্ট ধারক কোন কারনবশত যদি একটানা ৩ বছর প্রভিডেন্ট ফান্ডে কোনও অবদান না রাখেন সেক্ষেত্রে ইপিএফ অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে৷ অনেক ক্ষেত্রে চাকরি পরিবর্তন করার পর নতুন পিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা হলে আগের পিএফ অ্যাকাউন্টটি নির্দিষ্ট সময়ের পর নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় সেক্ষেত্রে পুরনো অ্যাকাউন্টের রাশি আগেই নতুন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করে নেওয়া উচিৎ। 

প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাব

সরকারী বা বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই পিএফ লাঘু হয় যখন বেসিক মাসিক বেতন হয় ₹১৫,০০০/- টাকা, সেক্ষেত্রে হলঃ

বেসিক বেতন + ডিএ = ₹১৫,০০০/-

ইপিএফ-এ কর্মচারীর অবদান = ₹১৫,০০০/- এর ১২% = ₹১৮০০/-

ইপিএফ-এ নিয়োগকর্তার অবদান = ₹১৫,০০০/- এর ৩.৬৭% = ₹৫৫০.৫০/-

সুতরাং ইপিএফ-এ মাসিক মোট অবদান = ₹১৮০০/- + ₹৫৫০.৫০/- =  ₹২৩৫০.৫০/-

এছাড়া ইপিএস-এ নিয়োগকর্তার অবদান = ₹১৫,০০০/- এর ৮.৩৩% = ₹১২৪৯.৫০/-

পিএফ অবদানের হার ১০%

নিচে বর্ণিত অবস্থাগুলির ক্ষেত্রে পিএফ অবদানের হার শুধুমাত্র ১০% ধার্য হয়ে থাকেঃ

  • যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলিতে কর্মী সংখ্যা হোল ২০ বা তার কম।
  • শিল্প ও আর্থিক পুনর্গঠনের বোর্ড বা বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড ফিনান্সিয়াল রেকনস্ট্রাশন (বিআইএফআর) দ্বারা যদি কোন শিল্পকে দুর্বল শিল্প হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
  • কোন প্রতিষ্ঠানে যদি নেট মূল্যের তুলনায় বার্ষিক ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়।
  • পাঁট, নারকেল ছোবড়া, আতশবাজি, ধূপ, বরফ, তুলা, কাগজ, বিড়ি বা তামাক জাত দ্রব্য প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান।

প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা

পিএফ হোল কর্মচারীদের জন্য উপলব্ধ সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় সঞ্চয় প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি। পিএফের সুবিধাগুলি নীচে উল্লেখ করা হলঃ

অবসরের জন্য সঞ্চয়ঃ 

পিএফ প্রধানত কর্মীদের অবসরকালীন সময়ের জন্যই সঞ্চয়ের একটি ব্যবস্থাপনা। এখানে প্রতি মাসে কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তার একটি মিলিত অবদান কর্মচারীর পিএফ অ্যাকাউন্টে যোগ হয় যা অবসরের সময় আর্থিক নিরাপত্তা প্রদান করে থাকে।

নিয়োগকর্তার অবদানঃ

পিএফের ব্যবস্থাপনা এমনই করা হয়েছে যেখানে কর্মচারীর পাশাপাশি নিয়োগকর্তাও এই অ্যাকাউন্টে অবদান রাখেন যা কর্মচারীর সঞ্চয় বাড়াতে সাহায্য করে।

সুদ লাভঃ

পিএফ সুদের হার প্রতি অর্থ বর্ষে সরকার দ্বারা ঘোষণা করা হয়ে থাকে। অর্থ বর্ষ ২০২৩-২৪ এ বার্ষিক সুদের হার হোল ৮.১৫% অর্থাৎ মাসিক সুদের পরিমাণ হোল ৮.১৫/১২=০.৬৭৯% যা চক্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সময়ের সাথে সঞ্চয় বাড়াতে সহায়তা করে।

কর ছাড় বা ট্যাক্স বেনিফিটঃ

ইপিএফ আমানত এবং সুদ ২০২০ সাল পর্যন্ত সম্পূর্ণ কর মুক্ত ছিল। তবে বাজেট ২০২১-এ সরকার ঘোষণা করে যে ১লা এপ্রিল ২০২২ থেকে কর্মচারীর ক্ষেত্রে বার্ষিক অবদান ₹২.৫ লক্ষ টাকা এবং নিয়োগকর্তার ক্ষেত্রে ₹৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পিএফ অবদান সম্পূর্ণ করমুক্ত এবং এই পরিমানের অধিক অবদানের ক্ষেত্রে তা করযোগ্য মানা হবে।

বীমা সুরক্ষাঃ

এমপ্লয়িজ ডিপোজিট লিঙ্কড ইন্স্যুরেন্স (EDLI) হোল একটি জীবন বীমা কভারেজ যা এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (EPFO) দ্বারা প্রতিটি ইপিএফ অ্যাকাউন্ট ধারককেই প্রদান করা হয়ে থাকে এবং এর জন্য কর্মচারীকে কোন বাড়তি অবদান দিতে হয় না।

চাকরিতে থাকাকালীন পিএফ অ্যাকাউন্টধারকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এই বীমার অর্থ যা কমপক্ষে ₹২.৫ লক্ষ টাকা এবং দীর্ঘকালীন চাকরির ক্ষেত্রে সর্বাধিক ₹৭ লক্ষ টাকা মনোনীত ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারকে দেওয়া হয়।

পেনশন সুবিধাঃ 

ইপিএফও প্রতিটি পিএফ অ্যাকাউন্টের সাথে ‘এমপ্লয়ীজ’ পেনশন স্কিম’ (EPS) প্রদান করে থাকে, তবে এই সুবিধার জন্য পিএফ অ্যাকাউন্টধারককে কমপক্ষে ১০ বছর চাকরি করতে হবে। পিএফ অ্যাকাউন্টধারক ৫৮ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার পরে তাঁর এই পেনশন চালু হবে। তবে অ্যাকাউন্টধারক চাইলে ৫০ বছর বয়সের পর ইপিএস -এর টাকা তুলে নিতে পারেন, কিন্তু সেক্ষেত্রে ৪% কেটে নেওয়া হবে।

জরুরী প্রত্যাহারঃ

পিএফ অ্যাকাউন্টধারক নির্দিষ্ট কিছু জরুরী অবস্থা যেমন অ্যাকাউন্টধারক বা তাঁর পরিবারের জরুরী চিকিৎসা, হোম লোণ পরিশোধ, বিয়ে, শিশুদের শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ৫০%-৯০% পর্যন্ত আংশিক প্রত্যাহার করতে পারেন।

প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা তোলার নিয়ম

এবার দেখে নেওয়া যাক, কি কি ক্ষেত্রে আপনি পিএফের টাকা সম্পূর্ণ বা আংশিক উত্তোলন করতে পারবেনঃ

সম্পূর্ণ উত্তোলনঃ

  • অবসর গ্রহণঃ পিএফ অ্যাকাউন্টধারক যখন ৫৮ বা ৬০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করবেন তখন তিনি সম্পূর্ণ EPF অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। এই অর্থ তিনি তাঁর পেনশন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে পারেন।
  • চাকরি ছেড়ে দেওয়াঃ পিএফ অ্যাকাউন্টধারক যদি কোনো কারণে চাকরি ছেড়ে দেন এবং এক মাসেরও বেশী সময় ধরে কোন চাকরি না করেন সেক্ষেত্রে তিনি মোট জমাকৃত রাশির ৭৫% পর্যন্ত তুলতে পারবেন এবং দুই মাসেরও বেশি সময় হলে তিনি সম্পূর্ণ পিএফ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন। তবে তিনি যদি চাকরি ছাড়ার অবিলম্বে অন্য চাকরি পান, সেক্ষেত্রে নতুন নিয়োগকর্তার কাছে পিএফ স্থানান্তর করতে পারেন।

আংশিক উত্তোলনঃ

শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে পিএফের আংশিক উত্তোলন করা যেতে পারে। সেগুলি নিচে উল্লেখ করা হলঃ

  • চিকিৎসার উদ্দেশ্যেঃ  ইপিএফ সদস্যরা তাঁর নিজের, পত্নী, সন্তান বা পিতামাতার চিকিৎসার জন্য তাদের মাসিক বেতনের (মূল বেতন এবং মহার্ঘ ভাতা) ৬ গুণ পর্যন্ত তুলতে পারেন।
  • গৃহঋণ পরিশোধঃ পিএফ অ্যাকাউন্টধারক হোম লোন পরিশোধের জন্য তাদের EPF ব্যালেন্সের ৯০% পর্যন্ত তুলতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে পিএফের সদস্যপদ কমপক্ষে ৩ বছরের হতে হবে এবং অ্যাকাউন্টে সুদ সহ মোট রাশির পরিমাণ ₹২০,০০০/- টাকার বেশি হতে হবে।
  • শিক্ষাঃ পিএফ অ্যাকাউন্টধারী তাঁর নিজের উচ্চ শিক্ষার জন্য বা তাদের সন্তানদের ১০ম শ্রেনীর পরে যে কোন উচ্চ শিক্ষার খরচ মেটাতে EPF এর মোট অবদানের ৫০% পর্যন্ত তুলতে পারেন। তবে অ্যাকাউন্টধারককে ন্যূনতম ৭ বছর পিএফ অবদান রাখার পরেই এই প্রত্যাহার করতে পারবেন।
  • বিবাহঃ একজন পিএফ অ্যাকাউন্টধারী তাঁর বিয়ে বা ছেলে, মেয়ে, ভাই বা বোনের বিবাহের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সের ৫০% পর্যন্ত তুলতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে PF অবদান ৭ বছর পূর্ণ করতে হবে।
  • জমি ক্রয়ঃ একজন পিএফ অ্যাকাউন্টধারক জমি কেনার ক্ষেত্রে সর্বাধিক ২৪ মাসের বেসিক বেতন ও মহার্ঘ ভাতা (DA) বা জমির মূল্য, যেটি কম হবে তা উত্তোলন করতে পারেন এবং এই সুবিধার জন্য পিএফ অ্যাকাউন্টের বয়স কমপক্ষে ৫ বছর হতে হবে।
  • বাড়ি ক্রয়/নির্মাণঃ বাড়ি তৈরি বা কেনার ক্ষেত্রে পিএফ অ্যাকাউন্টধারী সর্বাধিক ৩৬ মাসের বেসিক বেতন ও ডিএ অথবা বাড়ির মূল্য, যেটি কম হবে তা উত্তোলন করতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে অবশ্যই পিএফ অবদান কমপক্ষে ৫ বছর পূর্ণ হতে হবে।
  • বাড়ি মেরামতঃ বাড়ি মেরামতের ক্ষেত্রেও পিএফ অবদান কমপক্ষে ৫ বছর পূর্ণ হতে হবে এবং অ্যাকাউন্টধারী সর্বাধিক ১২ মাসের বেসিক বেতন ও ডিএ উত্তোলন করতে পারবেন।

ইউএএন কি

ইউএএন (UAN) হোল ‘ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর’ যা এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন (EPFO) দ্বারা সমস্ত পিএফ অ্যাকাউন্টধারীদের জন্য জারি করা হয়। এই ১২ সংখ্যার ইউএএন এর সাহায্যে অ্যাকাউন্টধারক তাঁর সবকটি পিএফ অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন।

পিএফ অ্যাকাউন্টধারকের চাকরি পরিবর্তন হওয়ার সাথে তার সদস্য-আইডি পরিবর্তন হয় এবং নতুন আইডিটি UAN-এর সাথে লিঙ্ক করা হয়। তবে অনলাইনে এই পরিষেবাগুলি ব্যবহার করতে অ্যাকাউন্টধারককে অবশ্যই ইউএএন মেম্বার ই-সেবা পোর্টালের মাধ্যমে ইউএএন সক্রিয় করতে হবে।

মেম্বার ই-সেবা পোর্টালের মাধ্যমে ইউএএন সক্রিয়করণের প্রক্রিয়াটি নিচে দেওয়া হলঃ

  • হোম পেজের ডানদিকের নিচে ‘অ্যাক্টিভেট UAN’ এ ক্লিক করতে হবে।
uan member e-sewa activate uan
  • ইউএএন অ্যাক্টিভেট পেজে আসার পর এপিএফও রেকর্ড অনুযায়ী অ্যাকাউন্টধারকের ইউএএন মেম্বার আইডি, আধার নম্বর, নাম, জন্ম তারিখ এবং মোবাইল নম্বর লিখতে হবে।
uan member e-sewa authorization uan
  • তারপর ক্যাপচা কোড লিখে ‘গেট অথরাইজেশন পিন’ এ ক্লিক করতে হবে এবং এরপর ইপিএফও নিবন্ধিত মোবাইল নম্বরে একটি পিনকোড ও একটি ওটিপি যাবে।
uan member e-sewa uan activate validate otp
  • মোবাইল নম্বরে আসা ওটিপি টি লিখে ‘ভ্যালিডেট ওটিপি অ্যান্ড অ্যাক্টিভেট ইউএএন’ এ ক্লিক করতে হবে।
  • অ্যাকাউন্টধারকের UAN অ্যাক্টিভেট হয়ে গেলে রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে একটি কনফার্ম ম্যাসেজ এবং পাসওয়ার্ড পাঠানো হবে।
  • ইউএএন সক্রিয় হয়ে যাওয়ার পর অ্যাকাউন্টধারক লগইন করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারেন।

ইপিএফ পাসবুক

ইপিএফ পাসবুক হল ব্যাঙ্কের পাসবুকের মতোই একটি নথি যেখানে ইপিএফ এবং ইপিএস অ্যাকাউন্টে কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তার করা সমস্ত অবদানের এবং তার সাথে অর্জিত সুদের সমস্ত বিবরণ থাকে। অ্যাকাউন্টধারকের যদি একাধিক পিএফ অ্যাকাউন্ট থাকে, তবে সেক্ষেত্রে প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পাসবুক থাকবে।

এই ইপিএফ পাসবুক অ্যাক্সেস করতে হলে আগে অফিসিয়াল EPFO ওয়েবসাইটে UAN (ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর) রেজিস্টার করতে হবে।

নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে আপনি ইপিএফ পাসবুক অনলাইন চেক করতে পারবেনঃ

  • প্রথমে আপনাকে ইপিএফ পোর্টাল -এ যেতে হবে এবং পেজের ডান দিকে ‘ই-পাসবুক’ এ ক্লিক করতে হবে।
epf portal e-passbook
  • এখানে আপনার ইউএএন, পাসওয়ার্ড ও ক্যাপচা কোড লিখে নিচের ‘সাইন ইন’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
  • এখানে আপনি আপনার পিএফ অনুদানের মোট ব্যালেন্স দেখতে পাবেন এবং বিস্তারিত দেখার জন্য ওপরের মেনু থেকে ‘পাসবুক’ -এ ক্লিক করতে হবে।
epf contribution summary
  • এই পাসবুক পেজে পিএফ অনুদান সম্বন্ধীয় যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে যেমন অ্যাকাউন্ট শুরুর বছর থেকে প্রতিটা মাসের পিএফ অনুদান, নিয়োগকর্তা এবং কর্মচারীর অনুদানের পরিমাণ, সুদের পরিমাণ ইত্যাদি। আপনি ‘ডাউনলোড অ্যাস পিডিএফ’ -এ ক্লিক করে রিপোর্টটি ডাউনলোড করতে পারবেন।

ইপিএফ ব্যালেন্স

পিএফ ব্যালেন্স আপনি ইপিএফও পোর্টাল, উমাং অ্যাপ, এসএমএস বা মিসড কলের মাধ্যমে জানতে পারেনঃ

উমাং অ্যাপের মাধ্যমেঃ

ইউনিফাইড মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ফর নিউ-এজ গভর্নেন্স (UMANG) অ্যাপ ভারতের ‘ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক’ (MeitY) এবং ‘ন্যাশনাল ই-গভর্নেন্স ডিভিশন’ (NeGD) দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। 

উমাং অ্যাপের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই পিএফ ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন।এছাড়াও, আপনি এই অ্যাপের মাধ্যমে দাবি ফাইল করতে এবং ট্র্যাক করতে পারবেন। তবে এই অ্যাপটি অ্যাক্সেস করতে অ্যাকাউন্টধারককে অবশ্যই তাঁর UAN-নিবন্ধিত ফোন নম্বর ব্যবহার করে রেজিস্টার করে নিতে হবে।

নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে আপনি উমাং অ্যাপের মাধ্যমে আপনার পিএফ ব্যালেন্স জানতে পারবেনঃ

  • গুগল প্লে স্টোর বা অ্যাপ স্টোর থেকে উমাং অ্যাপটি ইন্সটল করুন।
  • উমাং অ্যাপটি ওপেন করে সার্চ করুন ‘EPFO’।
umang app view passbook
  • ইপিএফও ব্যালেন্স দেখার জন্য আপনাকে UAN ও OTP এর মাধ্যমে লগইন করতে হবে।
  • এরপর ‘View Passbook’ এ ক্লিক করে আপনি সমস্ত বিবরণ দেখতে পাবেন।
umang app passbook
  • আপনি নিচের ‘ডাউনলোড’ বাটনে ক্লিক করে বিবরণটি সেভ করতে পারবেন।

এসএমএসের মাধ্যমেঃ

এসএমএস -এর মাধ্যমে ব্যালেন্স জানার জন্য অ্যাকাউন্টধারকের রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর থেকে ‘EPFOHO UAN BAN’ লিখে থেকে তা ৭৭৩৮২৯৯৮৯৯ নম্বরে পাঠিয়ে দিতে হবে।

এসএমএসের শেষের তিনটি অক্ষর হোল আপনার পছন্দের ভাষা। এক্ষেত্রে মোট দশটি স্থানীয় ভাষায় এই ব্যালেন্স জানা যাবে, যেমন ইংরেজি (ENG), হিন্দি (HIN), বাংলা (BEN), তামিল (TAM), তেলেগু (TEL), মালয়ালম (MAL), পাঞ্জাবি (PUN), গুজরাটি (GUJ), মারাঠি (MAR) এবং কন্নড় (KAN)। 

তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই আধার, প্যান এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লিঙ্কড থাকতে হবে।

মিসড কলের মাধ্যমেঃ

আপনি মিসড কলের মাধ্যমেও পিএফ অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স চেক করতে পারেন। তবে অ্যাকাউন্টধারকের ইউএএন -এর সাথে অবশ্যই যথাযত কেওয়াইসি করা থাকতে হবে। অ্যাকাউন্টধারকের রেজিস্টার্ড নম্বর থেকে ০১১-২২৯০১৪০৬ নম্বরে একটি মিসড কল দিলে আপনি পিএফ বিবরণ সম্বন্ধিত একটি এসএমএস পেয়ে যাবেন।

প্রভিডেন্ট ফান্ড সম্পর্কিত প্রশ্ন (FAQ)

যদি কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীর সংখ্যা ২০ জনের কম হয়, তাহলে কি কর্মচারীরা ইপিএফ-এ যোগ দিতে পারবেন?

প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তা যদি চান তবে স্বেচ্ছাসেবী কভারেজ ধারা -১(৪) এর বিধান অনুসারে স্বেচ্ছায় এই প্রকল্পে যোগদান করতে পারেন।

একজন সদস্য কতদিন পর্যন্ত তার অ্যাকাউন্টে চালু রাখতে পারেন?

প্রভিডেন্ট ফান্ডের রাশি তুলে না নেওয়া পর্যন্ত সদস্যপদ বজায় রাখা যেতে পারে। তবে, যদি ৩ বছরের বেশি সময় ধরে কোনও অবদান জমা না হয় তবে ৩য় বছরের পরে অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে এবং কোন সুদ জমা হবে না।

চাকরি ছাড়ার পর একজন কর্মচারী কি EPF-এ অবদান রাখতে পারেন?

না। মজুরি ছাড়া এবং নিয়োগকর্তার অনুপস্থিতিতে কোন রকম অবদান রাখা সম্ভব না।

কর্মচারীর থেকে পিএফ কাটা হোল কিন্তু নিয়োগকর্তা পিএফ-এ অবদান না রাখলে সেক্ষেত্রে কি হবে?

পিএফ সংস্থা সেক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার কাছ থেকে বকেয়া আদায় করবে এবং ইপিএফও IPC-এর ধারা-৪০৬/৪০৯-এর অধীনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পিএফ অ্যাকাউন্টধারক কি ১২% হারের বেশি অবদান রাখতে পারেন?

হ্যাঁ, পিএফ অ্যাকাউন্টধারক তার স্বাভাবিক অবদান ₹১৫০০০/- এর ১২% এর বেশি অবদান স্বেচ্ছায় রাখতে পারেন এবং সেক্ষেত্রে মাসিক সর্বাধিক অবদান ₹১৫,০০০/- পর্যন্ত হতে পারে। তবে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার (এপিএফসি) অথবা রিজিওনাল প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার (আরপিএফসি) কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মাসিক সর্বাধিক অবদানের মাত্রা আরও বাড়ানো যেতে পারে এবং নিয়োগদাতা তার অনুদান ১২% -এ সীমাবদ্ধ রাখতে পারেন।

পিএফ অ্যাকাউন্টধারক কি নিয়োগকর্তার থেকে অবদানের তথ্য দেখার দাবি করতে পারেন?

হ্যাঁ, নিয়োগকর্তার কাছ থেকে ‘ইলেকট্রনিক চালান কাম রিটার্ন’ (ইসিআর) ফর্মে প্রতিটি সদস্যের অবদানের কপি দাবী করা যেতে পারে।

কর্মচারীর কাছে কি পিএফ সদস্য হওয়া বা না হওয়ার কোনও বিকল্প আছে?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, পিএফ অবদান কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তা উভয়ের জন্যই বাধ্যতামূলক এবং পিএফ থেকে অপ্ট আউট সাধারণত করা হয় না৷ যদি কেউ পিএফ সদস্য না হতে চান, সেক্ষেত্রে নিয়োগকর্তা এবং স্থানীয় ইপিএফও অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

কোনো কর্মচারী কি সরাসরি ইপিএফ যোগ দিতে পারেন?

না, এটি শুধুমাত্র প্রভিডেন্ট ফান্ডস্‌ এবং মিস্লেনিয়াস প্রভিশনস আইন, ১৯৫২-এর অধীনে প্রতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থানের মাধ্যমেই হওয়া সম্ভব।

Leave a Comment