কর্মশ্রী প্রকল্পটি হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি নতুন স্কিম, যেটি ২০২৪-২৫ সালের বাজেটেই প্রথম ঘোষণা করা হয়। এই প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের প্রতিটি জব কার্ড হোল্ডারদের ৫০ দিনের কাজের যোগান নিশ্চিত করবে রাজ্য। এই নিবন্ধে কর্মশ্রী প্রকল্পের সুবিধা, যোগ্যতা, আবেদন প্রক্রিয়া প্রভৃতি সম্মন্ধে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হল।
কর্মশ্রী প্রকল্প কি?
রাজ্যের শ্রমিকদের কাজের যোগান বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে এই কর্মশ্রী প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি শ্রম দফতরের অধীনে বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সমন্বয় গঠিত। এই প্রকল্পের অধীনে যারা একটি প্রকল্পে ২০ দিন কাজ করবেন, তাদের অন্য প্রকল্পে আরও ২০ দিন কাজ দেওয়া হবে।
এই সকল জব কার্ডধারীরা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উন্নয়নমূলক কাজে যেখানে অদক্ষ কর্মীদের নিযুক্তির সুযোগ রয়েছে সে সমস্ত কাজে নিযুক্ত থাকবেন।
এছাড়া সরকারী তরফ থেকে জানান হয়েছে যে ৫০০টি কর্মতীর্থের মাধ্যমে প্রায় ১০ লাখ যুবক যুবতীদের ‘স্কিল ডেভলপমেন্ট’ ট্রেনিং দেওয়া হবে।
কর্মশ্রী প্রকল্প উদ্দেশ্য
শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে করা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি অ্যাক্ট’ (NREGA) প্রকল্পের ১০০ দিনের কাজের কথা আমরা সকলেই জানি। তবে ২০২২ সাল থেকেই NREGA তহবিল থেকে রাজ্য বঞ্চিত থাকায় এই রাজ্যের শ্রমিক শ্রেণী বিশেষ অসুবিধার মধ্যে পড়েছিলেন।
কেন্দ্রের তরফ থেকে জানান হয়েছে যে রাজ্য ১০০ দিনের কাজের টাকায় তছরুপ করেছে এবং হিসাব দেখাতে না পারার কারনে নিয়ম মেনেই টাকা আটকান হয়েছে।
রাজ্য তাই আর কেন্দ্রের ভরসায় না থেকে চলতি ২০২৪ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই বঞ্চিত ৫০ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারদের পাওনা মিটিয়েছে, যেখানে রাজ্যের প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে।
এরপরেই রাজ্য বাজেটে এই কর্মশ্রী প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়, যেখানে কেন্দ্রীয় প্রকল্প NREGA এর আদলেই রাজ্য সরকার জব কার্ড হোল্ডারদের বছরে ৫০ দিনের কাজের যোগান নিশ্চিত করবে। চলতি বছরের মে মাস থেকেই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে এবং এই অর্থবর্ষে ৭৫ লক্ষ জব কার্ড হোল্ডারদের কর্মশ্রী প্রকল্পের আওতায় অনুদান দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে রাজ্য সরকার।
কর্মশ্রী প্রকল্প বিবরণ
পশ্চিমবঙ্গের কর্মশ্রী প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত বিবরণটি নিচে দেওয়া হলঃ
যোজনার নাম | কর্মশ্রী প্রকল্প |
উদ্যোক্তা | পশ্চিমবঙ্গ সরকার |
শুরুর সময় | ২০২৪ সাল |
দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ | পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগ |
লাভার্থী | পশ্চিমবঙ্গের সকল জব কার্ড হোল্ডার |
উদ্দেশ্য | জব কার্ড হোল্ডারদের ৫০ দিনের কাজের যোগান নিশ্চিত করা |
আবেদন পদ্ধতি | অফলাইন |
সরকারী ওয়েবসাইট | karmashree.wbdeptemployment.in |
কর্মশ্রী প্রকল্প সুবিধাঃ
কর্মশ্রী প্রকল্পের নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি উল্লেখযোগ্যঃ
- পশ্চিমবঙ্গের অদক্ষ শ্রমিকরা বছরে ন্যূনতম ৫০ দিনের কর্মসংস্থান পাবেন।
- রাজ্যের ১০ লক্ষ যুবক যুবতীদের বিনামূল্যে ‘স্কিল ডেভলপমেন্ট’ ট্রেনিং দেওয়া হবে।
- রাজ্যে মোট ৫০০ টি কর্ম তীর্থ মার্কেটিং কেন্দ্র গঠন করা হবে, যেখানে মানুষেরা বিনামূল্যে দোকান পাবেন।
কর্মশ্রী প্রকল্প যোগ্যতাঃ
কর্মশ্রী প্রকল্পের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত যোগ্যতাগুলি প্রয়োজনঃ
- আবেদনকারীকে অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- আবেদনকারী একজন জব কার্ড হোল্ডার হবেন।
- কোন শ্রমিকের জব কার্ড না থাকলে তিনি জব কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
- পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী সকল জব কার্ড হোল্ডার হলেন কর্মশ্রী প্রকল্পের জন্য যোগ্য।
- SC/ST এবং মহিলা কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
কর্মশ্রী প্রকল্প প্ল্যান
কর্মশ্রী প্রকল্পটি বেশ কয়েকটি প্রকল্পের সাথে মিলিত ভাবে কাজ করার পরিকল্পনা নিয়ে গঠন করা হয়েছে, এবং নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে এই প্রকল্পটি পরিচালিত হয়ে থাকেঃ
- বিভিন্ন বিভাগগুলি মিলিত ভাবে এই কর্মশ্রী প্রকল্পের জন্য একটি বার্ষিক কাজের পরিকল্পনা তৈরি করে, তারপর কাজগুলি মাসিক ভিত্তিতে বিভক্ত করা হয়।
- প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসে, কর্মশ্রী প্রকল্পের প্রতিটি বিভাগের কার্যক্রমগুলি যাচাই করা হবে এবং সাথে পরবর্তী অর্থবছরের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনাও স্থির করা হবে।
- এছাড়া এই প্রকল্পের অধিনস্ত প্রতিটি বিভাগের প্রস্তুত করা বার্ষিক কাজের পরিকল্পনার ভিত্তিতে ‘পঞ্চায়েত এবং গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগ’ মার্চ মাসের মধ্যেই পরবর্তী আর্থিক বছরের জন্য বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুত করবে।
কর্মশ্রী প্রকল্প আবেদন
কর্মশ্রী প্রকল্পে অদক্ষ কর্মীরা নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে আবেদন করতে পারবেনঃ
- কর্মশ্রী প্রকল্পের অধীনে কর্মসংস্থানের জন্য অদক্ষ কর্মীরা গ্রাম পঞ্চায়েত বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসে অ্যানেক্সার-I ফর্মের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন এবং একটানা সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ বা ১৪ দিনের জন্য কাজের দাবি করতে পারেন। আবেদনের ফর্ম জমা দেওয়ার পর কর্মপ্রার্থীদের যথাযথ রশিদ দেওয়া হবে।
- কর্মপ্রার্থীদের সংখ্যা ও কাজের হিসাব রাখার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস একটি চাহিদা ও বরাদ্দের রেজিস্টার ব্যবহার করে, যেখানে চাকরির দাবি করা কর্মীদের তালিকা এবং তাদের জব কার্ড এবং আধারের বিশদ থাকে।
- জব কার্ডধারী ভবিষ্যতের চাকরির জন্য পরবর্তী সময় আবেদনপত্র জমা দিতে পারেন, সেই ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থীকে কাজ দেওয়া হবে।
কর্মশ্রী প্রকল্পে কিভাবে কাজ হয়
কর্মশ্রী প্রকল্পে নিয়োগ পদ্ধতিটি হল নিম্নরূপঃ
- কোন সংস্থা দ্বারা কাজের আদেশ জারি হওয়ার পর বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক আধিকারিক জেলা নোডাল অফিসারকে (MGNREGS) কর্মীর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পরবর্তী ১৪ দিনের জন্য দৈনিক ভিত্তিতে কত সংখ্যক কর্মী নিযুক্ত করতে হবে সে সম্পর্কে জানাবেন।
- কাজ শুরু করার কমপক্ষে ৭ দিন আগে বা পরবর্তী প্রয়োজনীয়তার ৭ দিন আগে, এভাবে ধারাবাহিক রূপে জেলা নোডাল অফিসারকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
- জেলা নোডাল অফিসার (MGNREGS) সেই রিপোর্টটিকে সংশ্লিষ্ট BDO-র কাছে পাঠাবেন, যিনি ডিমান্ড রেজিস্টার থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীদের নিয়োগ করবেন।
- এক্ষেত্রে সাধারণত একটি পরিবার থেকে একজন মজুরি-প্রার্থীকে চাকরি দেওয়া হয় যাতে সর্বাধিক সংখ্যক পরিবারকে কভার করা যেতে পারে।
কর্মশ্রী প্রকল্প যোগাযোগ
কর্মশ্রী প্রকল্প সম্বন্ধিত তথ্যের জন্য নিম্নলিখিত মাধ্যমে আপনি পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেনঃ
- ঠিকানাঃ Joint Administrative Building, Saltlake Sec-III, Kolkata – 700106
- ইমেইলঃ support@karmashree.com
কর্মশ্রী প্রকল্প সম্পর্কিত প্রশ্ন
পশ্চিমবঙ্গ কর্মশ্রী প্রকল্প কি?
কর্মশ্রী প্রকল্পটি হল পশ্চিমবঙ্গের সকল জব কার্ডধারকদের জন্য একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাপনা, যেখানে কার্ড হোল্ডারদের বার্ষিক ন্যূনতম ৫০ দিনের কাজের যোগান দেওয়া হবে।
কর্মশ্রী প্রকল্প কত সালে চালু হয়?
পশ্চিমবঙ্গের কর্মশ্রী প্রকল্পটি ২০২৪ সালে চালু করা হয়।
কর্মশ্রী প্রকল্পটি কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের অন্তর্গত?
কর্মশ্রী প্রকল্পটি ‘পঞ্চায়েত ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিভাগ’ এর অন্তর্গত।