Updated on June 12th, 2024 ||
লাখপতি দিদি যোজনাটি হল ভারত সরকারের গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রক দ্বারা পরিচালিত একটি উদ্যোগ, যার লক্ষ্য হল গ্রামীণ এলাকার মহিলাদের আর্থিক ক্ষমতায়ন করা। এটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চালু করা হয়েছিল এবং প্রাথমিক ভাবে ২ কোটি মহিলার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়, যা ২০২৪-২৫ সালের বাজেটে বাড়িয়ে ৩ কোটি করা হয়েছে। এই নিবন্ধে লাখপতি দিদি যোজনা কি, সুবিধা, যোগ্যতা, আবেদন ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হল।
লাখপতি দিদি যোজনা কি
লাখপতি দিদি হলেন তারাই যারা ভারত সরকারের স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর (Self-Help Groups) সদস্য হয়ে নিজস্ব স্কিল ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে বার্ষিক এক লক্ষ টাকা বা তার বেশি আয় করছেন। এটি শুধুমাত্র সাময়িক আয়ের জন্য নয়, বরং এই যোজনার লক্ষ্য হল কৃষি বা ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০,০০০/- টাকা বা তার বেশি আয়ের যোগানের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি সাধন করা।
দেশে ৯০ লক্ষেরও বেশি এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে, যেখানে প্রায় ১০ কোটিরও বেশি মহিলার ক্ষমতায়ন এবং স্বনির্ভরতার সাথে গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অনেকখানি পরিবর্তন করা সম্ভব হয়েছে।
লাখপতি দিদি যোজনা উদ্দেশ্য
ভরতের মহিলাদের বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত করতে, তাদের স্বনির্ভর ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষমতায়নের জন্য ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার অনেকগুলি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যার সুফল বিভিন্ন ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাচ্ছি। ২০২৩ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী মহিলা শিল্পোদ্যোগের সংখ্যা গত ৫ বছরে প্রায় ১৮% বৃদ্ধি পেয়েছে।
মহিলাদের ক্ষমতায়নের অন্যতম উদ্দেশ্যগুলি নিচে উল্লেখ করা হলঃ
- দেশের একটি শীর্ষ ম্যানেজমেন্ট কনসাল্টিং ফার্মের রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে প্রায় ১.৫ কোটি মহিলা আছেন যারা হলেন বিভিন্ন শিল্পোদ্যোগের মালিক এবং যা হল দেশের মোট শিল্পোদ্যোগের প্রায় ২২%। তাই আশা করা যাচ্ছে যে মহিলাদের সঠিক সহায়তা প্রদান করা হলে ভবিষ্যতে মহিলা শিল্পোদ্যোগের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ছাড়াতে পারে।
- এছাড়া মহিলাদের ক্ষমতায়নের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন হল যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমি ফোরামের ২০২৩ এর রিপোর্ট অনুযায়ী লিঙ্গ বৈষম্যের সূচকে ভারত ১৪৬ এর মধ্যে ১২৭ র্যাঙ্কে অবস্থান করছে, যা ২০২২ এর ১৩৫ র্যাঙ্কের চেয়ে অনেকটাই উন্নত।
- আমাদের দেশের একটি বৃহৎ অংশই হল গ্রামীণ ক্ষেত্র এবং ভারতের জনসংখ্যার একটি অন্যতম ভাগ হল এই গ্রামীণ মহিলারা। তাই তাদেরকে বিভিন্ন কারিগরি বিদ্যায় শিক্ষিত করে ও কর্মোদ্যোগী করার মাধ্যমে শুধুমাত্র তাদের জীবনযাত্রা উন্নত হওয়াই নয়, তার সাথে সামাজিক ও আর্থিক ক্ষেত্রের উন্নতি সাধন করাও সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামীণ মহিলাদের এই যোগদানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
লাখপতি দিদি যোজনা বিবরণ
লাখপতি দিদি যোজনার বিবরণগুলি নিম্নবর্তী সারণীতে উল্লেখ করা হলঃ
যোজনার নাম | লাখপতি দিদি |
উদ্যোক্তা | কেন্দ্রীয় সরকার |
শুরুর সময় | ডিসেম্বর ২০২৩ সাল |
দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ | গ্রামীণ উন্নয়ন মন্ত্রক |
লাভার্থী | ভারতবর্ষের মহিলারা |
উদ্দেশ্য | দেশের মহিলাদের স্বরোজগারি করার জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করা |
অনুদানের পরিমাণ | সুদ ছাড়া ₹৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান |
আবেদন পদ্ধতি | অফলাইন |
সরকারী ওয়েবসাইট | lakhpatididi.gov.in |
লাখপতি দিদি যোজনা সুবিধা
লাখপতি দিদি যোজনার অধীনে মহিলারা কর্ম উদ্যোগ সম্বন্ধীয় বিভিন্ন সুবিধে পাবেন, নিচে সেগুলি উল্লেখ করা হলঃ
- এই যোজনার অধীনে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর (Self-Help Groups) সদস্য রূপে বিভিন্ন ধরণের কারিগরি প্রশিক্ষণ পাবেন যেমন কৃষি, হস্তশিল্প, প্রযুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি।
- মহিলাদের ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা প্রদান করা হয় যাতে তারা নিজেরা সহজেই কোন উদ্যোগ নিতে পারেন।
- স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর প্রতিটি মহিলাকে তার নিজের ব্যবসা শুরু করার জন্য সুদ বিহীন ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে।
- এই যোজনায় দক্ষতা উন্নয়ন এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের সাথে যেসব মহিলারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদের ব্যবসা শুরু করার জন্য নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
- এখানে মহিলাদের বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তির সাথে পরিচয় করান হয় যেমন পেমেন্টের ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা, মোবাইল ওয়ালেট এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়ে থাকে।
- ১৫,০০০ মহিলাদের কৃষি ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে যেখানে ড্রোনের সাহায্যে কিভাবে ফসলের দেখাশোনা, জীবাণুনাশক স্প্রে করা, বীজ ছড়ানো ইত্যাদি শেখান হবে, যা গ্রামীণ মহিলাদের এবং কৃষিক্ষেত্রে উভয়দিকেই লাভবান হওয়া যাবে।
লাখপতি দিদি যোজনা রোড ম্যাপ
লাখপতি দিদি যোজনাটি নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে কাজ করে থাকেঃ
স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী (SHG) গঠনঃ
লাখপতি দিদি যোজনার প্রথম ধাপ হল স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠন, যার মধ্যে থাকবেন মাস্টার ট্রেইনার এবং কমিউনিটি রিসোর্স পার্সন। এদের কাজ হল সম্ভাব্য লাখপতি দিদিদের চিহ্নিত করা। সাধারণত অনুরূপ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের ১০-২০ জন মহিলাদের নিয়ে এক একটি স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী গঠিত হয়ে থাকে।
দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণঃ
স্বনির্ভর গোষ্ঠী গঠিত হওয়ার পর বিভিন্ন জীবিকার মডেলে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই সমস্ত সেশন প্ল্যান, প্রেসেন্টেশন, রেফারেন্স নথি, ভিডিও ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোডও করা যেতে পারে।
বাজার সংযোগঃ
এরপর প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মহিলাদের নিয়ে প্রথমে তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রের যেমন দ্রব্য প্রস্তুত বা সেবামুলক কাজ অনুযায়ী পরিকল্পনা স্থির করা হয়। তারপর অনুরূপ কাজের জন্য বাজার সংযোগ স্থাপন করতে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, সরকারী ও বেসরকারী খাতের অংশীদারিত্ব ক্ষেত্রগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করা হয়ে থাকে।
মনিটরিংঃ
আজিভিকা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে জীবিকার কার্যক্রম এবং আয় রিপোর্ট করা হবে।
লাখপতি দিদি যোগ্যতা
লাখপতি দিদি যোজনার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত যোগ্যতাগুলি প্রয়োজনঃ
- ভারতের শুধুমাত্র মহিলা অধিবাসীরাই এই যোজনায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।
- আবেদনকারীকে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর একজন সক্রিয় সদস্য হতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- মহিলার পরিবারের কোনো সদস্য সরকারি চাকরি করলে হবে না।
- আবেদনকারী মহিলার পরিবারের আয় বার্ষিক ৩ লক্ষ টাকার বেশি হবে না।
লাখপতি দিদি যোজনা ডকুমেন্টস
লাখপতি দিদি যোজনায় আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার নিম্নলিখিত নথিগুলি প্রয়োজনঃ
- আধার কার্ড
- প্যান কার্ড
- আয় শংসাপত্র
- ঠিকানা প্রমাণ
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ডিটেলস
- মোবাইল নম্বর
- ই-মেইল আইডি
- পাসপোর্ট সাইজ ছবি
লাখপতি দিদি যোজনা আবেদন
নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে আপনি এই যোজনার আবেদন করতে পারবেনঃ
- লাখপতি দিদি যোজনায় আবেদনের আগে আপনাকে প্রথমে একটি স্থানীয় স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীতে (SHG) যোগ দিতে হবে। এই গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমেই সরকারী বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে তাই সেখান থেকেই আপনি যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন।
- লাখপতি দিদি যোজনায় আবেদনের জন্য আপনাকে নিকটতম অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যেতে হবে। সেখানে আপনি স্কিম সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পাবেন এবং তারা আপনাকে আবেদন প্রক্রিয়ার সঠিক নির্দেশনাও দেবে।
- আপনি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই আবেদনপত্র পাবেন এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি সহ আবেদনপত্র সেখানেই জমা দিতে পারবেন।
লাখপতি দিদি লিস্ট
ভারত সরকার স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীগুলির (Self-Help Groups) মাধ্যমে দেশের গ্রামীণ ক্ষেত্রগুলির উন্নতি সাধনের জন্য সহায়তা প্রদান করে থাকে। ১০-২০ জন বা তার বেশি মহিলা দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার তাগিদে একটি স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী গঠন করতে পারে। প্রত্যেক গোষ্ঠীকে NRLM (National Rural Livelihood Mission) এর অধীনে রেজিস্টার করাতে হবে, তবেই সরকারী অনুদানের টাকা তারা পেতে পারেন।
আপনি NRLM এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট nrlm.gov.in থেকে স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীগুলির লিস্ট চেক করতে পারেন, অথবা সরাসরি ক্লিক করুন লাখপতি দিদি লিস্ট।
লাখপতি দিদি যোজনা সম্পর্কিত প্রশ্ন
লাখপতি দিদি যোজনা কি?
লাখপতি দিদি যোজনা হল ভারত সরকারের একটি প্রকল্প যেখানে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত মহিলাদের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে এবং ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদ-মুক্ত ঋণ প্রদান করা হয়ে থাকে যাতে তারা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে বা কোন কর্মস্থানে যুক্ত হয়ে বার্ষিক কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা আয় করতে পারেন।
লাখপতি দিদির জন্য কীভাবে আবেদন করবেন?
লাখপতি দিদি যোজনা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য পেতে এবং আবেদনের জন্য আপনাকে নিকটতম অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে যেতে হবে। সেখান থেকেই আপনি আবেদনপত্র ও প্রয়োজনীয় নথিগুলি জমা করার মাধ্যমে এই যোজনার আবেদন করতে পারবেন।
লাখপতি দিদি কে?
লাখপতি দিদি হলেন একজন স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীর (SHG) সদস্য যিনি লাখপতি দিদি যোজনার অধীনে কারিগরি প্রশিক্ষণ নেওয়ার মাধ্যমে বার্ষিক কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা বা তার বেশি আয় করছেন।