কিষাণ ক্রেডিট কার্ড কি ও তার সুবিধা, ফর্ম এবং কিভাবে বানাবেন জানুন

Updated on June 27th, 2024 ||

কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (KCC) স্কিমটি ভারত সরকার ১৯৯৮ সালে দেশের কৃষকদের আর্থিক সহায়তার উদ্দেশ্যে চালু করেছিল। এই প্রকল্পটি ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (NABARD) দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল যা PM কিষাণ ক্রেডিট কার্ড যোজনা নামেও পরিচিত।

KCC কার্ডটি চালু করা হয়েছিল ঋণদাতাদের উচ্চ সুদের হার থেকে ভারতীয় কৃষকদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে। কৃষকদের প্রয়োজন ও সুবিধার কথা মাথায় রেখে এতে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেমন কৃষকরা কম সুদের হারে যখন প্রয়োজন তখন ছোট ছোট ঋণ খুব সহজেই নিতে পারবেন এবং সময়মতো অর্থ শোধ দিলে সুদের হারেও ছাড় পাবেন। 

পূর্বে এই কার্ডের সুবিধা শুধুমাত্র কৃষকদের জন্যই প্রযোজ্য ছিল কিন্তু ২০১৮-১৯ এর বাজেটে মৎস্যজীবী ও পশুপালনকারীদেরও (পোল্ট্রি) এই সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

১৫.০১.২০২০ তারিখের শেষ সার্কুলার অনুযায়ী পিএম-কিষাণ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ৯.৪ কোটি এবং সক্রিয় KCC হোল্ডারদের সংখ্যা হোল ৬.৭৬ কোটি।

Table of Contents

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের উদ্দেশ্য

ভারত সরকার কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য এই কিষাণ ক্রেডিট কার্ডটি চালু করেছে, যার মূল উদ্দেশ্য হল স্বল্প সুদে কৃষকদের ঋণ প্রদান করা। 

সারা বছর চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে কৃষকদের ঋণের প্রয়োজন হয় যেমন শস্যবীজ কেনার খরচ, ফসল পরবর্তী খরচ, খামার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ প্রভৃতি। এই সমস্ত খরচের জন্য আগে কৃষকদের সুদ ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর করতে হত যেখানে সুদের হারও ছিল বেশী এবং জমানতও রাখতে হত, তার ওপর শিলাবৃষ্টি, খরা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে কৃষকদের প্রবল সমস্যার সম্মুখীন হতে হত।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে কৃষকদের এই সমস্ত সমস্যারই সমাধান করা সম্ভব হয়েছে যেমন কম সুদের হারে প্রয়োজন মত ঋণ নেওয়া যাবে, নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণের ক্ষেত্রে কোন জমানতের প্রয়োজন নেই এমনকি অর্থ পরিশোধের সময়ের ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হয়েছে।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ড বিবরণ

যোজনার নামকিষাণ ক্রেডিট কার্ড
যোজনার ধরণকেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্প
দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রণালয়
যোজনার উদ্দেশ্যকৃষক, মৎস্যজীবী ও পশুপালনকারীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান
যোজনার সুবিধাস্বল্প সুদের হারে ঋণ, জমানতের প্রয়োজন নেই, শস্য বীমা প্রভৃতি
আবদেন প্রক্রিয়াঅনলাইন ও অফলাইন

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা

এই কার্ডের সাথে আপনি নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পাবেনঃ

  • ভারত সরকার কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে ২% সুদের সাবভেনশন এবং ৩% প্রম্পট রিপেমেন্ট ইনসেন্টিভ প্রদান করে অর্থাৎ আপনি ৩ লক্ষ টাকা ঋণ যদি ১ বছর সময়ের মধ্যে শোধ করে দেন তবে সুদের হারে ৩% অতিরিক্ত ছাড় পাবেন।
  • KCC এর অন্যতম সুবিধা হোল আপনি মাত্র ৪% সুদের হারে ঋণ পেতে পারেন।
  • এই কার্ডের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়া যাবে।
  • যদি আপনি ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেন তবে সেক্ষেত্রে কোনরকম জমানত লাগবে না।
  • বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে কৃষকদের ক্ষতির কথা মাথায় রেখে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড ধারকদের শস্য বীমা কভারেজ দেওয়া হয়।
  • KCC এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হোল দুর্ঘটনা বীমা। এই কার্ড ধারকদের মৃত্যু বা স্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে ₹৫০,০০০ পর্যন্ত এবং অন্যথায় ₹২৫,০০০ পর্যন্ত ব্যক্তিগত দুর্ঘটনা বীমা পাওয়া যায়।
  • এই কার্ডের ঋণ পরিশোধের সময়কাল ফসল কাটা এবং বিপণনের সময়কালের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
  • কৃষকরা যদি নির্ধারিত ১ বছর সময়ের মধ্যে অর্থ প্রদান করেন সেক্ষেত্রে তাদের সাধারণ সুদের হার ধার্য করা হয়।
  • কার্ডধারীরা সময়মত অর্থ প্রদান করতে ব্যর্থ হলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ ধার্য করা হয়।
  • স্বল্পমেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সীমা হোল ৫ বছর  এবং দীর্ঘমেয়াদী ঋণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অনুমতিযোগ্য সীমা (MPL) এবং কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সীমা বিবেচনা করা হবে।
Kisan Credit Card Scheme

KCC আবেদনের যোগ্যতা

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের জন্য যোগ্যতার মানদণ্ডগুলি নিচে উল্লেখ করা হোলঃ

  • স্বতন্ত্র বা যৌথ সকল কৃষক এই কার্ড পাওয়ার যোগ্য।
  • KCC এর জন্য ন্যূনতম বয়স হোল ১৮ বছর।
  • সর্বোচ্চ বয়স হোল ৭৫ বছর।
  • ঋণগ্রহীতা যদি প্রবীণ নাগরিক হন অর্থাৎ বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে সেক্ষেত্রে একজন সহ-ঋণগ্রহীতা বাধ্যতামূলক যেখানে সহ-ঋণ গ্রহীতাকে আইনগত উত্তরাধিকারী হতে হবে।
  • ভাড়াটিয়া কৃষক, মৌখিক ইজারাদার, এবং ভাগচাষী এই কার্ড পাওয়ার অধিকারী।
  • স্বনির্ভর গোষ্ঠী (এসএইচজি) বা কৃষকদের যৌথ দায়বদ্ধতা গোষ্ঠী (জেএলজি) সহ ভাড়াটিয়া কৃষক প্রভৃতি।

  • অভ্যন্তরীণ মৎস্য ও জলজ চাষ- মৎস্যজীবীগণ ব্যক্তি, স্বনির্ভর বা যৌথ দায়বদ্ধতা গোষ্ঠী অথবা মহিলা গোষ্ঠী এবং অংশীদারী বা ভাড়াটিয়া মৎস্য চাষী প্রভৃতি যাদের অবশ্যই মৎস্য সংক্রান্ত যে কোনও ক্রিয়াকলাপ যেমন পুকুর, ট্যাঙ্ক, উন্মুক্ত জলাশয়, রেসওয়ে, হ্যাচারি, লালন-পালন ইউনিট, মাছ চাষ এবং মাছ ধরা সম্পর্কিত ক্রিয়াকলাপের জন্য লাইসেন্স থাকতে হবে।

  • সামুদ্রিক মৎস্য- উপরে তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগী যাদের মোহনা এবং সমুদ্রে মাছ ধরার নৌকা বা জাহাজ রয়েছে বা যারা ইজারা দেন অথবা যাদের কাছে মোহনা এবং খোলা সমুদ্রে মাছ চাষ/মেরিকালচার কার্যক্রমের অনুমতি এবং অন্য কোনো রাজ্যের সাথে মৎস্য ও সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের লাইসেন্স আছে।

  • হাঁস-মুরগি এবং ছোট খামারী-  হাঁস, মুরগি, ভেড়া, ছাগল, শুয়োর, খরগোশ, পাখির খামারির মালিক বা ভাড়া/লিজ দেওয়া ব্যক্তিগত বা যৌথ ঋণগ্রহীতা, যৌথ দায়বদ্ধতা গোষ্ঠী বা স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীগুলি।

  • ডেয়ারি- দুগ্ধ খামারির মালিক অথবা ভাড়া বা লিজড দেওয়া ব্যক্তিগত বা যৌথ ঋণগ্রহীতা, যৌথ দায়বদ্ধতা গোষ্ঠী বা স্ব-সহায়ক গোষ্ঠীগুলি এই কার্ডের অধিকারী।

আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি যোজনা

কিষাণ ক্রেডিট কার্ড কিভাবে বানাবেন

এই কার্ডের জন্য আবেদন আপনি অনলাইন বা অফলাইন যেকোনো উপায়ই করতে পারেন। অনলাইন আবেদন করার প্রক্রিয়াটি নিচে বর্ণনা করা হলঃ

  • আপনি যে ব্যাঙ্কে কিষাণ ক্রেডিট কার্ড স্কিমের জন্য আবেদন করতে চান তার ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
  • ক্রেডিট কার্ডের তালিকা থেকে ‘কিষাণ ক্রেডিট কার্ড’ সিলেক্ট করতে হবে।
  • এরপর ‘আবেদন’ -এ ক্লিক করলে আপনি আবেদন করার পেজটি পাবেন।
  •  আপনাকে ফর্মটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে।
  • এরপর আপনাকে একটি আবেদনের রেফারেন্স নম্বর পাঠানো হবে। আপনি যোগ্য হলে আবেদনের কিছুদিনের মধ্যেই (সর্বোচ্চ ১৪ দিন) আপনি কিষাণ ক্রেডিট কার্ডটি পেয়ে যাবেন।

অফলাইন আবেদন করতে হলে নিচের পদ্ধতি অনুসরন করুনঃ

  • অফলাইনের ক্ষেত্রে আপনাকে অফিসিয়াল পিএম কিষাণ পোর্টাল pmkisan.gov.in যেতে হবে।
  • হোম পেজে ফার্মার্স কর্নার থেকে ‘ডাউনলোড KCC ফর্ম’ এ ক্লিক করে আবেদনপত্র ডাউনলোড করে তা যথাযথ ভাবে পূরণ করে ব্যাঙ্কের শাখায় জমা করতে হবে।
  • আবেদনকারীর সুবিধার জন্য তিনি ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে ব্যাঙ্ক প্রতিনিধির সাহায্যে সহজেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ড আবেদনের প্রয়োজনীয় নথি

KCC আবেদনের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত নথিগুলি প্রয়োজনীয়ঃ

  • আবেদনকারীর আইডি প্রমাণ যেমন আধার কার্ড, ভোটার আইডেন্টিটি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাসপোর্ট।
  • ঠিকানার প্রমাণ যেমন আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট।
  • ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার অধিক লোণের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর জমির কাগজ দরকার হবে।

আরও পড়ুনঃ প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা

শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলির কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার ব্যাঙ্ক বিশেষে পরিবর্তিত হয়। নীচের সারণীতে শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলির KCC এর সুদের হার উল্লেখ করা হলঃ

ব্যাঙ্ককিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া৭%
অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক৮.৮৫%
এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক৯%
আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক৯.৬%

কিষাণ ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কিত প্রশ্ন (FAQ)

কিষাণ ক্রেডিট কার্ড ঋণের জন্য কীভাবে আবেদন করবো?

আপনি ব্যাঙ্কের ওয়েবসাইট থেকে অনলাইন ফর্ম পূরণ করতে পারেন বা ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ঋণের সীমা কত?

এই কার্ডের সর্বোচ্চ সীমা হোল ৩ লক্ষ টাকা। ১.৬০ লক্ষ টাকা ঋণের ক্ষেত্রে কোন জমানতের প্রয়োজন নেই।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের জন্য কারা যোগ্য?

KCC এর জন্য সকল কৃষকগণ একা বা মালিক চাষীরা যৌথ ভাবে ঋণ গ্রহন করতে পারেন। সকল ভাড়াটিয়া কৃষক, মৌখিক ইজারাদার, ভাগ চাষি এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা কৃষকদের যৌথ দায়বদ্ধতা গোষ্ঠী এই ঋণের জন্য যোগ্য।

KCC এর জন্য বয়স সীমা কত?

এই কার্ডের আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি এবং ৭৫ বছরের কম হতে হবে। যদি আবেদনকারীর বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি হয়, তবে একজন সহ-ঋণগ্রহীতা প্রয়োজন যিনি আবেদনকারীর আইনি উত্তরাধিকারী বা আত্মীয় হবেন।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডে সুদের হারের ভর্তুকি কত?

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ঋণ ১ বছর সময়ের মধ্যে পরিশোধ করলে ভারত সরকার সুদের হারের ওপর বার্ষিক ৩% ভর্তুকি প্রদান করে থাকে।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ম্যাচুরিটি সময়কাল কত?

এই কার্ডের বৈধতার মেয়াদ হোল ৫বছর। তবে এটি আরও ৩ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের ঋণের অর্থ কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে?

কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন সংক্রান্ত খরচ, কৃষি কাজের দৈনন্দিন খরচ বা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল, কৃষি সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ, মার্কেটিং সংক্রান্ত খরচ, এছাড়া অন্যান্য সহযোগী কার্যকলাপ সংক্রান্ত খরচগুলির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।

Leave a Comment